স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০১৯, ১৮:৪৯

গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তন আবেদনের ওপর গণশুনানি, ছবি: বার্তা২৪
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের গণশুনানির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অসাংবিধানিক উল্লেখ করে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিলের দাবি করেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
সোমবার (১১ মার্চ) বিইআরসিতে প্রথম দিনে গণশুনানিতে অংশ নিয়ে এমন দাবি জানান ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম।
তিনি বিইআরসি আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আইনের ২ (ঝ) উপধারা ও ৩৪(৫) উপধারা মতে একবার দাম বৃদ্ধির গণশুনানির পর এক বছর অতিবাহিত না হলে আর দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। গত বছরের এপ্রিলে গণশুনানি নেওয়া হয়। এখনো এক বছর পূর্ণ হয়নি, তাই এই শুনানির কোনো আইনগত বৈধতা আমি দেখছি না।’
এছাড়া এপ্রিলে উচ্চমূল্যের আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আসবে তার ভিত্তিতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিইআরসির আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। ভোক্তার ঘরে পৌঁছে দেওয়ার আগে কোনোভাবেই দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘এই কমিশন কখনোই আইনগতভাবে এগিয়ে চলেনি। আমরা যতবার আবেদন করেছি কোনো বারই কোনো সুরাহা হয়নি।’
এ সময় কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘আমরা কিন্তু আন্তরিক, আপনাদের আবেদন নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেছি, বাইলেটারাল আলোচনাও করেছি।’
জবাবে শামসুল আলম বলেন, ‘একটিও কি রিজেক্ট করেছেন? মহানুভবতা দেখিয়েছেন, উদারতা দেখিয়েছেন, করুণা করেছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার করেননি, যদি একটিরও সুরাহা হতো তাহলে বুঝতে পারতাম। যদি একটিও দেখিয়ে দিতেন এই আইনের কারণে আপনাদের আবেদন বাতিল করা হলো তাহলেও বলতে পারতেন। কিন্তু কোনোটারই কোনো সুরাহা হয়নি।’

তার এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘আমরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি তিনিও আমাদের জানিয়েছে এর কোনো বৈধতা নেই। আজকে বাতিলের দাবি জানাচ্ছি, আশা করি আমাদের আবেদন বিবেচনা করবে বিইআরসি। আর যদি এরপরও শুনানি অব্যহত থাকে তাহলে একইসঙ্গে কোর্ট এবং রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অতীতে অনেকবার এসেছি প্রতিবাদ করেছি কিন্তু দাম ঠিকই বাড়ানো হয়েছে। রাস্তায় বের হলে মানুষ আমাদের বলে, কোনো লাভতো হয় না যান কেন। এর জবাব দিতে পারি না।’
এ সময় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘জ্বালানি সেক্টরের চুরি খুবই বড়। চুরি ঠেকাতে না পারলে ভাল কিছু সম্ভব নয়। বিইআরসি খুচরা দাম নির্ধারণ করে। বাল্ক প্রাইস নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়।’
দুর্ঘটনার পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের জন্য বিশেষ ফান্ড গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।
গ্যাসের ঘাটতি দূর করতে হলে এলএনজি আমদানি জরুরি। এলএনজি এক হাজার এমএসসিএফডি পাইপ লাইনে যুক্ত হলে বছরে ২৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা ঘাটতি হবে বলে মন্তব্য করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, ‘এই ঘাটতি মোকাবেলা করতে হলে গ্যাস দাম বাড়ানো জরুরি। বর্তমানে ৫০০ এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানি হচ্ছে। আগামী এপ্রিলে আরও ৫০০ এমএমসিএফডি পাইপ লাইনে যুক্ত হবে।’
বর্তমানে গড়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ৭ দশমিক ১৭ টাকা দরে বিক্রি করছে। এর সঙ্গে এলএনজি চার্জ ৯ দশমিক ৫৫ টাকা হারে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা।
এরপরে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিটিসিএল তাদের হুইলিং চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করে। চলতি অর্থ বছরে ইউনিট প্রতি ৫৬ পয়সা করার আবেদন করেছে। তাদের বিদ্যমান হুইলিং চার্জ রয়েছে ৪২ পয়সা।
বিকেলে কমিশনের সদস্য আব্দুল আজিজ বলেন, ‘দেশের রিসোর্স কীভাবে বাড়ানো যায় দেখা হবে। জ্বালানি যতো আমদানি নির্ভর হবে, দাম ততো বাড়বে। আর এই শুনানির মানে এই নয় যে এটা দাম বাড়ছে। আবার বাড়ছে না কোনোটাই বলার সময় হয়নি। যারা এলপিজি ব্যবহার করে, যারা লাকড়ি ব্যবহার করে তাদের আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। এক বছরের মধ্যে
দাম বাড়ানো যাবে না আইনে এমন বাধ্যবাধকতা সরাসরি বলা নেই। বলা হচ্ছে এক বছরের মধ্যে দাম বাড়ানো যাবে না যদি না দাম বেড়ে যায় বা অন্যকোনো কারণে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’
তার এই বক্তব্যে হৈচৈ শুরু হয়ে যায় শুনানি কক্ষে। অনেকে দাঁড়িয়ে তার বক্তব্যকে পক্ষপাত দুষ্টু বলে অভিহিত করেন। এ সময় তার পদত্যাগ দাবি করেন সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। হৈচৈ থামাতে চেয়ারম্যান মাইক নিয়ে দ্রুত সভা সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও সুন্দরবন ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর শুনানি হবে।

