জাতীয়

গণপরিবহনে এখনো অনিরাপদ নারীরা

হাদিদ মোঃ জাবির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম

প্রকাশ: ৮ মার্চ ২০১৯, ১৬:৪৪

গণপরিবহনে এখনো অনিরাপদ নারীরা

এভাবেই প্রতিদিন অনেক মানুষের ভিড় ঠেলে গণপরিবহনে উঠতে হয় নারীদের, ছবি: বার্তা২৪

কোন রাষ্ট্র বা সমাজ কতটা সভ্য বা উদার তা অনেকটা নির্ভর করে সেখানকার নারীদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থানের ওপর। বলা হয়ে থাকে, আমাদের সমাজ সচল রাখতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অর্ধেক ভূমিকা পালন করে। আমাদের সমাজে নারীদের বিচরণ এখন ঘরে, বাইরে, সর্বত্র। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অবদান অসামান্য।

কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে যখন নারীরা রাস্তায় বের হন তখন কোন পুরুষ সহযাত্রীর কালো হাত, অশ্লীল মন্তব্য, যৌন হয়রানির চেষ্টা থামিয়ে দিতে চায় নারীর পথচলাকে। বিকৃত মানসিকতার কিছু পুরুষের এসব আচরণের ফলে শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও হেনস্থার শিকার হন নারীরা।

প্রতিদিন অন্য সবার মতোই সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে হয় নারীদের। কিন্তু পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে গণপরিবহনে নারীদের যুদ্ধটা একটু আলাদাই। তাদের জন্য গণপরিবহনে উঠাতে পারাটাই ছোট খাটো যুদ্ধের মতোই।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/08/1552041733337.jpg

আর যখন যুদ্ধে জিতে তারা গণপরিবহনে উঠেন, তখন মানসিক বিকারগ্রস্ত কিছু লোকের হাতের স্পর্শ, ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয়া, অশ্লীল মন্তব্য শোনা নারীদের নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের মাস্টার্স এর ছাত্রী ইসতার জাহান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীর চলাচলের একমাত্র মাধ্যম গণপরিবহন। কিন্তু এই গণপরিহনে নারীর যাত্রা এক আতঙ্কের নাম। একজন নারীকে বাইরে বেরোতে গেলে আগে ভাবতে হয় সে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেতো? তার সাথে কোন আপত্তিকর ঘটনা ঘটবে নাতো? অথচ আমাদের স্বাধীন দেশ যেখানে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশ থেকেই এগিয়ে তবুও আজও নারীর নিরাপত্তায় অন্যান্য অনেক দেশ থেকেই পিছিয়ে আমাদের দেশ।'

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/08/1552041751690.jpg

তিনি আরও বলেন,' এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে আমার মনে হয় সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নারীর ক্ষমতায়ন আগে নয়, সবার আগে নারীকে সম্মান করতে শিখতে হবে। তাতেই নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম হবে।'

সালমা সিদ্দিকী, কাজ করেন এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'নারীদের জন্য এখন তার কর্মক্ষেত্রে যাওয়া এক মহাসাগর পাড়ি দেয়ার সমান। প্রতিদিন প্রায় ঘণ্টা লেগে যায় বাসে জায়গা পেতে। তারপর প্রায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মধ্যে পড়ে যেতে হয়। তখন দেখা যায় নারীদেরকেই সবাই দোষ দিচ্ছে।'

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি বলেন, 'আগে আমাদের মানসিকতা ঠিক করতে হবে। এরপর আইনের প্রয়োগ।'

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/08/1552041766332.jpg

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের জরিপে উঠে এসেছে যে দেশের ৯৪ শতাংশ নারী গণপরিবহনে সহিংসতার শিকার হন। বিশেষজ্ঞদের মতে আইনের প্রয়োগের মাধ্যমেই নারীদের চলার পথ মসৃণ করতে হবে।

এই ব্যাপারে নারী নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'বাসে কেবল দুইটা কিংবা তিনটা সারি নারীদের জন্য রেখে দিলেই হবে না। সেইখানে সব নারীরাই যেন জায়গা পায় সেই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে। বাসের সংখ্যাটা বড়ালেই যে যাত্রী চাপটা থাকে সেইটা কমে যাবে। সেই ব্যাপারে সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে যেমন বিআরটিসি কাজ করতে পারে। তারা বাসের সংখ্যা বাড়ালে সবাই নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে। তাছাড়া নারীদের জন্য আলাদা বাস এইসব দিয়ে হবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'নারীবান্ধব হেল্প লাইন যেটি আছে সেটাকে কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি বাস চালক, হেল্পারদের এর সাথে যুক্ত করা যেতে পারে। তাছাড়া যারা এই হেল্প লাইনে থাকেন তাদেরকে প্রতি মাসে মনিটরিং করে তাদের কাজের আপগ্রেড নিতে হবে। পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হবে যে আইন আছে তার কার্যকর প্রয়োগ করতে হবে।'