সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
প্রকাশ: ৬ মার্চ ২০১৯, ১৭:৪৫

ভুল আসামি হিসেবে অন্যের সাজা ভোগ করা জাহালম, ফাইল ছবি
ভুল আসামি হিসেবে অন্যের সাজা ভোগ করা জাহালমের মামলার শুনানিকালে আদালত দুদক আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘কেউ চায়না দুদক সম্পর্কে মানুষের ধারণা খারাপের দিকে যাক। তবে দুদককেও পরিচ্ছন্ন (ক্লিন) হতে হবে।’
এ সময় দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, চ্যানেল২৪ -এ জাহালমের বিষয়ে রিপোর্ট আসার পর জাহালম যে নির্দোষ, সে বিষয়ে দুদক তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। সে তদন্তে জাহালম যে নির্দোষ তা উঠে আসে। তদন্তে দেখা গেছে যে, সে অভিযুক্ত না। তাই আমরা তো বিষয়টি নিয়ে সঠিক পথেই আছি।’
তখন আদালত বলেন, চ্যানেল২৪ -এ রিপোর্ট হওয়ার আগে তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) কী করেছেন? দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আপনাদের অনেক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। যে বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে না, সেই বিড়াল থাকার দরকার নেই।’
জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, ‘আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে।’
আদালত বলেন, ‘আগে অনেকেই দুর্নীতিকে ঘৃণা করতো। কিন্তু এখন এর অবক্ষয় হচ্ছে।’
দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘সোনালী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে জাহালমকে নিয়ে আমরা তদন্ত করেছি।’
আদালত তখন বলেন, ‘আপনারা সেসব তথ্য কি যাচাই বাছাই করবেন না? আপনারা রিপোর্টে বলছেন, জাহালম ১৮ ব্যাংক থেকে লোন (ঋণ) নিয়েছে। কিন্তু এখন মুখে দুইটি ব্যাংককে মামলায় পক্ষভুক্ত করতে চাচ্ছেন?’
দুদক আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের কাছে মামলার সব ফাইল আছে। একটু সময় দিন, সব আপনাদের দেব।’
তখন আদালত দুদক আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘ব্রাক ব্যাংকের একজনকে সাক্ষী বানালেন, কিন্তু আসামি করলেন না কেন? আপনারা জাহালমের মামলাটি তদন্ত করেছেন কিনা?’
দুদক আইনজীবী বলেন, ‘করেছি। তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে।‘
আদালত জানতে চান, ‘জাহালমকে যে নির্দোষ, তা কবে জানতে পারলেন?’
দুদক আইনজীবী বলেন, ‘চ্যানেল২৪ থেকে জেনে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তদন্ত করার পর তার নির্দোষের বিষয়ে জানতে পারি।’
আদালত বলেন, ‘তদন্ত করে যখন দেখলেন সে নির্দোষ, তাহলে তাকে প্রসিকিউশন ছেড়ে দিল না কেন? তদন্তের পর আপনাদের উচিৎ ছিল তার জামিন দেওয়া। এরপরও মামলার শুনানিকালে আদালতে ও আপনাদের কাছে সে বারবার বলেছে- আমি জাহালম, আবু সালেক না। তারপরও তার জামিনের ব্যবস্থা করলেন না। তাহলে তার বিরুদ্ধে কিসের ভিত্তিতে চার্জশিট দাখিল করলেন? এর দায় আপনাদের নিতে হবে।’
এ সময় দুদক আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের সময় দিন। আমরা সকল কাগজ প্রমাণ আদালতে দাখিল করব। আপনারা এখন এ মামলায় দুইটি ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করে নিন।’
তখন আদালত বলেন, ‘আপনারা পিক অ্যান্ড চ্যুজ করছেন।’
জবাবে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘কোর্ট চাইলে আমরা সকলকে (১৮টি ব্যাংক) পক্ষভুক্ত করে নেব।’
আদালত বলেন, ‘যাকে আসামি বানানোর কথা ছিল, তাদের আপনারা সাক্ষী বানিয়েছেন। অন্যসব ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করতে হবে। যেখানে অর্থনীতির সক্ষমতা বাড়ছে, সেখানে সিন্ডিকেট করে সব নিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখা দরকার।’
এরপর আদালত এ মামলার সকল নথি তলব করে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১০ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

