আইন-আদালত

২০ বছরেরও শাস্তি পেলো না উদীচী হত্যাযজ্ঞের খলনায়কেরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, যশোর, বার্তা২৪.কম

প্রকাশ: ৬ মার্চ ২০১৯, ০২:০৩

২০ বছরেরও শাস্তি পেলো না উদীচী হত্যাযজ্ঞের খলনায়কেরা

ছবি: বার্তা২৪

# উচ্চ আদালতে আটকে আছে মামলার কার্যক্রম

যশোরের নারকীয় উদীচী হত্যাযজ্ঞের দু‘দশক হচ্ছে ৬ মার্চ। ১৯৯৯ সালের এই দিন গভীর রাতে যশোর টাউন হল মাঠে চলছিল উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানেই পর পর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এতে নিহত হন ১০ জন। আহত হন আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের দু’দশক পার হলেও বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি মূল ঘাতকদের। এমনকি বাস্তবে কারা এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছিল তাও উদ্ঘাটন হয়নি আজো। ঘাতকদের হত্যার বিচার চাইতে চাইতে হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহতের স্বজন, আহত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় এবং রামকৃষ্ণের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। এতবড় একটি বর্বর ঘটনার বিচার এবং ঘাতকদের শাস্তি না হওয়ায় এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বোমা হামলায় আহতরা।  

উদীচী ও আদালত সূত্র জানায়, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান।

উদীচী ট্রাজেডিতে আহত সুকান্ত দাস বলেন, উদীচী ট্র্যাজেডির ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পরবর্তীতে সেই আওয়ামী লীগ আরও তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু ২০ বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। আমরা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির কথা বলি। সেই স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকতেও যখন বিচার হয় না, তখন খুব কষ্ট লাগে। উদীচী ট্র্যাজেডির পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডের কিন্তু বিচার হয়েছে। আমি মনে করি সরকারের সদিচ্ছা থাকলে উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হবে।

উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত তপনের বোন নাজমুস সুলতানা বিউটি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অনেক বিচার হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হচ্ছে না। আমার মা বার্ধক্যে পড়েছেন। মৃত্যুর আগে সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে চান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি দ্রুত উদীচী হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।

উদীচী ট্র্যাজেডিতে দুই পা হারানো নাহিদ বলেন, দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন হামলাকারীদের বিচার দেখতে চাই।

উদীচী যশোরের সহ সভাপতি মাহবুবুর রহমান মজনু বলেন, দেশে বোমা হামলার কালো অধ্যায় শুরু হয় যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে। নৃশংস এই হামলার ‘খলনায়কদের’ ষড়যন্ত্র এখনও রয়েছে অব্যাহত। এদেরকে নিশ্চিহ্ন ও বিচারের মুখোমুখি করা না গেলে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির এই ষড়যন্ত্র থামানো কঠিন।

যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রফিকুল ইসলাম পিটু বলেন, বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই মামলার ২৩ আসামির মধ্যে ২ জন নিহত এবং একজন মৃত্যুবরণ করেছে। বাদবাকিরা জামিনে রয়েছেন। তিনি এই মামলা নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি আশাবাদী শিগগির উচ্চ আদালতে মামলাটির কার্যক্রম শুরু হবে। 

এদিকে, প্রতিবছরের মত এবারও ৬ মার্চ ঘাতকদের বিচারের দাবিতে ও উদীচী শহীদদের স্মরণে আলোচনা, স্মরণসভা, শহীদ স্মারকে মোমবাতি প্রজ্জ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন স্বজন বন্ধু ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

২০ বছরেরও শাস্তি পেলো না উদীচী হত্যাযজ্ঞের খলনায়কেরা | সময় নিউজ