প্রকাশিত : ১০ মার্চ ২০২৫, ১১:৪০:১৬
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ১২৪টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দায়ের করেছে, যেগুলোর তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। পাশাপাশি তার পরিবারের সাত সদস্যের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য দিয়েছে। বৈঠকের পরে প্রেস বিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এদিনের সভায় আগের সরকারের আমলে পাচার হওয়া ‘২৩৪ বিলিয়ন ডলার’ ফেরাতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে একটি বিশেষ আইন করার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে বলেও তুলে ধরেন তিনি।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিএফআইইউ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনবিআর ও পুলিশের অপরাধ দমন বিভাগের (সিআইডি) যৌথ দলের অনুসন্ধানে ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনটির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, এসব অর্থ অবরুদ্ধের পাশাপাশি যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) ও বিএফআইইউ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দলিলমূল্যের রাজউকের ৬০ কাঠা প্লট, ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমি ও আটটি ফ্ল্যাট জব্দ করেছে। এছাড়া ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা স্থিতিসহ ১১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাশিয়ান ‘স্লাশ ফান্ড’ এর অস্তিত্বও চিহ্নিত হয়েছে।
যৌথ দলের অনুসন্ধানের বরাতে প্রেস সচিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ অর্থপাচারের মামলার অন্তত ৫০% নিষ্পত্তির পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি অগ্রাধিকারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্তে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে সম্পদের তথ্য পাওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, বিএফআইইউ ১৫ কোটি ৬ লাখ টাকাসহ ১২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে।
তিনি বলেন, জালিয়াতি, প্রতারণা ও কর ফাঁকির অভিযোগে সাইফুজ্জামান ও তার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এনবিআর ১১টি মামলা তদন্ত করছে। আদালত ইতোমধ্যে ২০ কোটি টাকার চারটি সম্পত্তি ’সংযুক্ত’ (আদালতের মাধ্যমে পাওনাদারের কাছে হস্তান্তর) করেছে এবং আরও দুটি ফ্ল্যাট ও ৩১,৫৯৪.৩৯ শতাংশ জমি ’সংযুক্তির’ জন্য আবেদন করা হয়েছে।
এছাড়া ৩৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং ১০২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সম্পদ সংযুক্তির জন্য তিনটি মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানোর তথ্যও তুলে ধরা হয় যৌথ অনুসন্ধান দলের প্রতিবেদনে।
বিফ্রিংয়ে প্রেস সচিব বলেন, বিএফআইইউ ও যৌথ তদন্ত দল ১১টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মামলার তদন্তে ১০টি মামলার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। চারটি মামলার মধ্যে একটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বর্তমানে তদন্তাধীন। দেশি-বিদেশি ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ৮৪ জন অভিযুক্তের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
যৌথ অনুসন্ধান দলের তদন্তে বিদেশে ১,৮১৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ ও সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। অবরুদ্ধ ব্যাংক হিসাবের মোট স্থিতি ৮৭২ কোটি টাকা এবং ১,৩৭৪টি ব্যাংক হিসাব থেকে ৬১৪ কোটি টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া ১৯ দশমকি ৬৮ হাজার কোটি টাকার শেয়ার ও ১৮৮টি বিও হিসাবের ১৫ দশমিক ৫০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
পাশাপাশি আদালত ১,২৪৬ লাখ মার্কিন ডলার, প্রায় ৩৮ লাখ পাউন্ড ও ১১৭ লাখ ইউরো মূল্যের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছে।
এইচএস