জামালপুর সদর উপজেলার গোপালপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন জোর গুঞ্জন।
প্রকাশিত : ২৯ মার্চ ২০২৫, ৭:০৫:৩১
জামালপুর সদর উপজেলার গোপালপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন জোর গুঞ্জন। আলোচনা, সমালোচনা আর বিস্ময়ের কেন্দ্রে একটি পরিবার – বাবা বদিউজ্জামান ওরফে জামাল মিলিটারি এবং তার দুই পুত্র খোরশেদ আলম মিলন ও খায়রুল বাশার লিটন। এই পরিবারটি নাকি রাতারাতি ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগ থেকে পুরোদস্তুর বিএনপি বনে গেছে!
আওয়ামী লীগের স্বর্ণযুগে এই পরিবারের দাপট ছিল দেখার মতো। বাবা জামাল মিলিটারি, স্থানীয় আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তিনি নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য, চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্মে জড়িত থেকে অগুনতি টাকা কামিয়েছেন। গোপালপুর বাজারে আওয়ামী লীগের যেকোনো মিটিং-মিছিল তার উপস্থিতি ছাড়া যেন পূর্ণতা পেতই না। বড় ছেলে খোরশেদ আলম মিলন, যিনি নিজেকে "আওয়ামী চেতনায় বেড়ে উঠা মুজিব আদর্শের নেতা" এবং বর্তমানে "শহীদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নের সাহসী সৈনিক" হিসেবে পরিচয় দেন, তার অতীতও আওয়ামী লীগের সাথে গভীরভাবে জড়িত। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। এমনকি তার মা নাকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে পুরষ্কারও লাভ করেছিলেন, যা মিলন ও তার পরিবার গর্বের সাথে প্রচার করত। ছোট ছেলে খায়রুল বাশার লিটনও ছিলেন একই পথের পথিক। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও মেয়রদের সাথে ছবি তুলে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতেন এবং সুযোগ বুঝে নানা কাজ বাগিয়ে নিতেন বলে শোনা যায়। অথচ, আজ চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেই প্রতাপশালী আওয়ামী লীগ পরিবার এখন নাকি বিএনপির পোড়খাওয়া কর্মী! খোরশেদ আলম মিলন, যিনি একসময় মুজিব আদর্শের কথা বলতেন, এখন শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক! লিটনও বলছেন, জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের সাথে মিশতে হয়েছে, কিন্তু মনে মনে তিনি সবসময় বিএনপির আদর্শ ধারণ করতেন।
অথচ আমাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়- খাইরুল বাশার লিটন গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন এমপি-মন্ত্রীদের সাথে যোগাযোগ রেখে তার ভাইয়ের হাতকে অনেক শক্ত করেছে এই রাজনীতির মাঠে। ফায়দা নিয়েছেন নানাভাবে। এই ভোল পাল্টানোর নাটক এখানেই শেষ নয়। শোনা যাচ্ছে, খোরশেদ আলম মিলন নাকি আগামীতে সদর উপজেলায় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী! শুধু তাই নয়, আগামী যেকোনো বড় নির্বাচনে তিনি নাকি সর্বদলীয় প্রার্থী হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করতে চান! তাদের এই রাতারাতি রূপান্তর দেখে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে হাসির রোল উঠেছে। যারা এতদিন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে দাপট দেখিয়েছেন, মানুষের উপর অত্যাচার করেছেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, তারা কীভাবে এত দ্রুত অন্য দলের কর্মী বনে গেলেন – এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। এবার একটু একটা প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ লিপির দিকে দৃষ্টি দিতে চাই। যেখানে - জামালপুর জেলা শহর থেকে প্রকাশিত "দৈনিক প্রনবাংলা" পত্রিকায় "ফেইসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগ মানিকগঞ্জে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তরুণী গ্রেপ্তার হলেও জামালপুরে আপোষ।” শিরোনামে একটি সংবাদ, এছাড়া ' দৈনিক নবতান " এবং অনলাইন বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করেছেন জামালপুর সদর উপজেলার গোপালপুর বাজার এলাকার হাজী মো: বদিউজ্জামান (জামাল) এর বড় ছেলে মোঃ খোরশেদ আলম মিলন সরকার । এখানে যে লাইনটি আপনাদেরকে বারবার বলতে চাই- সেটি হলো- ’আমি ও আমার পরিবারের সকল সদস্যগন বংশানুক্রমে আওয়ামী পরিবারের সদস্য।’ কী শুনে হাসবেন নাকি কাঁদবেন। এই তারাই নাকি এখন আবার বলছেন জিয়ার সৈনিক!
আরও জানলে অবাক হবেন- এই এডভোকেট হাফিজুর রহমান স্বপন বর্তমানে জামালপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যেন তেন পদ নয়, ওখানকার সাধারণ সম্পাদক। ওদিকে, ৮ নং বাসচডা ইউনিয়নের বিনা ভোটে নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদর থানা লীগের কোষাধ্যক্ষ জনাব আব্দুল জলিল, ইঞ্জিনিয়ার মিলনের উকিল শশুর। আর মো: মাহাবুবুল আলম রিপেল বর্তমানে সাংগঠনিক সম্পাদক, ৮ নং বাঁসচডা ইউনিয়ন বিএনপি। এবার বুঝলেন তারা কতটা চালাক যে এই বলেন পরিবারসহ আওয়ামী লীগ আবার এখন ভাগাভাগি করে করছেন বিএনপির রাজনীতি। মানে এখন আবার পরিবারসহ বনে গেছেন বিএনপি নেতা। ওদিকে আমাদের হাতে তথ্য রয়েছে এ পরিবারের সাথে রয়েছে সাবেক ভূমি মন্ত্রীর রেজাউল করিম হীরার সঙ্গে ব্যপক সখ্যতা। রেজাউল করিম হীরা হলেন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। যিনি ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জামালপুর-৫ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এই হীরার সঙ্গে সখ্যতার পরিচয় দিয়ে কত মানুষকে যে নির্যাতন আর ধান্দা করেছেন তার অসংখ্য তথ্য রয়েছে এলাকাবাসীর কাছে। বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেত্রী নিলুফা চৌধুরী মনি সাথে কিছুদিন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার পর তার রাজনৈতিক অবস্থা দুর্বল হওয়ায় সাথে সাথে ইঞ্জিনিয়ার খোরশেদ আলম মিলন ওরফে (ওয়ালটন) মিলন জামালপুর সদরের মাটি ও মানুষের নেতা জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জনাব ওয়ারেস আলী মামুন ভাইয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা অর্জন করতে বিভিন্নভাবে মামুন ভাইয়ের নামে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন জনাব ওয়ারেশ আলী মামুনের সাহেবের সাথে সম্পর্ক নিবিড় করে তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সর্বোচ্চ ফায়দা লোটার জন্য। কত বড় সাংঘাতিক ধান্দাবাজ- এ পরিবার; তা কী বুঝকে বাকি থাকে? আশ্চর্য্যের বিষয় হলো, আগেও বলেছি- এই পরিবারের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক কিন্তু একদিনের নয়। বর্তমান ৮ নং বাসচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল তাদের উকিল শ্বশুর। গত দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই জলিলকে জেতানোর জন্য বাবা বদিউজ্জামান ও খোরশেদ আলম মিলন নাকি লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। এমনকি গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফিজুর রহমান স্বপনের জন্যও তারা মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান করেছিলেন।
তবে গল্পের মোড় আরও ঘোরালো। হাফিজুর রহমান স্বপনের খালাতো ভাই মাহবুবুর আলম রিপেল, যিনি একইসাথে থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খোরশেদ আলম মিলনের পছন্দের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, তার মাধ্যমেই নাকি এই আর্থিক লেনদেন হয়েছিল! মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম রিপেল এর বড় ভাই (সোহেল পাগলা নামে পরিচিত ) এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পাশাপাশি নানা অসামাজিক কার্যকলাপের মাধ্যমে যুবসমাজ ধ্বংসের পিছনেও ওদের হাত রয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। স্থানীয়দের মধ্যে কানাঘুষা চলছে, খোরশেদ আলম মিলনের এই ভোল পাল্টানোর পেছনে গভীর উদ্দেশ্য রয়েছে। আমেরিকায় তাদের পরিবারের সদস্যদের বসবাস এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের কারণে তিনি নাকি আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এখন রাজনৈতিক ছত্রছায়া পরিবর্তন করে তিনি নতুন করে নিজের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এই প্রেক্ষাপটে, প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক – যারা এতদিন একটি দলের আদর্শের ধ্বজা ধরে ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছেন, তারা কীভাবে এত সহজে অন্য দলের আদর্শ গ্রহণ করতে পারেন? মানুষের বিশ্বাস ও নীতিবোধ কি এতই ঠুনকো?
গোপালপুরের মানুষজন এখন এই পরিবারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের এই ভোল পাল্টানোর খেলা কতদিন চলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, এই ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে এক নতুন কৌতুকের জন্ম দিয়েছে। যারা এতদিন আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাদের মুখে এখন বিএনপির স্লোগান শোনাটা সত্যিই এক মজার দৃশ্য! মানুষ যে কত সহজে রং বদলাতে পারে, এই পরিবার তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আর তাদের এই ভোল পাল্টানোর নাটকের শেষ কোথায়, কারণ তাদের পরিবার থেকে নাকি করতে চায় ইলেকশনও! এসব নাটকের শেষ পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়- তা জানতে করতে হবো- আরও কিছুদিন অপেক্ষা।