ফ্রি ভিসার নামে শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস'র
মালয়শিয়াতে
প্রকাশিত :
০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০৭:২৪
আপডেট :
০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০৭:২৪
পাভেল আহমেদ, মালয়েশিয়া: দারিদ্রতা থেকে মুক্তি এবং পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়ে ভিসা ও কর্মহীন শত শত বাংলাদেশি মাসের পর মাস চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন দেশটিতে। ঢাকার ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন তারা।
এদিকে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস (আরএল-১০৮৪) স্বত্বাধিকারী মো: মাহফুজুর রহমান চলতি বছরে প্রায় ৫০০ শতাধিক বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট থেকে ছেড়ে দেয়। বাধ্য হয়ে নিজেদের আত্মীয়র বাসায় আশ্রয় নেয়া এসব কর্মীদের ভিসা এবং কাজ না থাকায় দিনদিন বাড়ছে হতাশা। অন্যদিকে রিক্রুটিং এজেন্সি ও নিয়োগকর্তা ফোন রিসিভ না করায় চোখে দেখছে সর্ষেফুল এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা।
এছাড়া ফ্ল্যাইটের কয়েক ঘন্টা আগে কর্মীদের পাসপোর্ট টিকেট হাতে দেয়ার পূর্বে রিক্রুটিং এজেন্সির শেখানো স্বীকারক্তি না দিলে ফ্লাইটের পাসপোর্ট টিকিট দিবেনা ভয় দেখিয়ে এসব কর্মীদের জোড়পূর্বক স্বীকারক্তি ম্যাক্সের নিজস্ব ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করা হয়।
সেখানে দেখা যায় কর্মীরা বলতে বাধ্য হচ্ছেন তারা ফ্রি ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ, থাকা+খাওয়া নিজেরাই জোগাড় করবেন। এছাড়া মেডিকেলে আনফিট হয়ে দেশে ফিরলে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই দায়ী থাকবে না। এমনকি মালয়েশিয়ায় গিয়ে কর্মীরা যদি নিজেদের স্বীকারক্তি অস্বীকার করে তাহলে দেশে থাকা তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে রিক্রুটিং এজেন্সী।
যদিও মালয়েশিয়া বাংলাদেশ কর্মী নিয়োগ চুক্তি এমওএউতে উল্লেখ রয়েছে প্রত্যেক কর্মীর কাজ, বাসস্থান, চিকিৎসা, ভিসা ফি এবং যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নিয়োগকর্তা।
এছাড়া মালয়েশিয়ার শ্রম আইনানুযায়ী যে কোম্পানীর ভিসা সেই কোম্পানী ছাড়া অন্যকোথাও কাজ করা গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলে ৩-৬ মাসের জেল জড়িমানার বিধান রয়েছে।
প্রতারণার শিকার যশোরের জুনায়েদ সাকি, সাইফুল ইসলাম, বগুড়ার তাইজুল ইসলাম, কুমিল্লার শাহাদাত হোসেন, কক্সবাজারের আরমান, রাজশাহীর আরিফুল ইসলাম, মাগুরার সালেক উদ্দিন, নওগাঁর সাইদুল ইসলাম, নরসিংদীর সুমন, সিরাজগঞ্জের হাফিজুল ইসলাম, জামালপুরের তুহিন মিয়াসহ কয়েকশ ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ৫ লাখ টাকা নিয়ে মার্কেটের ভিসা দিবে বলেছিল। কিন্তু এখানে আসার পর দেখি ভিসা তো দুরে থাক কথা কাজের কোন মিল নাই। কাছে পাসপোর্ট ভিসা কিছুই নেই, খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট'র জোড়পূর্বক স্বীকারক্তি নিজস্ব ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করেন। এখন ভয়ে কিছু বলতেও পারিনা। কারণ কিছু বললের যদি দেশে থাকা পরিবারের বিরুদ্ধে উল্টা আইনের ব্যবস্থা নিবে বলে ভয় দেখাইছে। আমরা এখন কার কাছে কি বলবো কিছু বুজতে পারছি না।
শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়ে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এর মালিক মো: মাহফুজুর রহমানের সাথে মুঠোফনে যোগাযোগ করলে এ প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করেন, আপনাকে মালয়েশিয়ায় সাংবাদিকতা করার অনুমতি কে দিয়েছে? আপনি আমাকে চিনেন? এছাড়াও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন যা প্রকাশ অযোগ্য।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার মিনিষ্টার নাজমুস সাদাত সেলিম বলেন, মালয়েশিয়ায় ফ্রি ভিসা বলতে কিছু নেই। কর্মীদের থেকে এমন মিথ্যা স্বীকারক্তি নেয়া অবশ্যই মানবপাচারের মতো অপরাধ। অভিযোগ পেওললে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।