ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

গোর-এ শহীদে ঈদের নামাজ আদায় করবেন ৬ লাখ মুসল্লি

গোর-এ শহীদে ঈদের নামাজ আদায় করবেন ৬ লাখ মুসল্লি

ছবি সংগৃহীত

সারাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ মে ২০২২ | ১৫:৫৬ | আপডেট: ০২ মে ২০২২ | ১৬:০৫

করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল দেশ তথা এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দান। মঙ্গলবার (৩ মে) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই জামাত। ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আয়োজকরা বলছেন, এ বছর ৬ লাখের বেশি মুসল্লির সমাগম হবে। এজন্য নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 

সরেজমিনে মাঠের সবশেষ প্রস্তুতিতে গিয়ে দেখা যায়, কাতার প্রস্তুতের জন্য মাঠের উত্তর-দক্ষিণ বরাবর লাইন করে দেয়া হয়েছে। মাঠের চারদিকে বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। কঠোর নিরাপত্তার কথা ভেবে ওয়াচ টাওয়ারে সংযুক্ত করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। মাঠের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ইমামের কথা পৌঁছানোর জন্য মাঠজুড়ে বসানো হয়েছে কয়ক’শ মাইক। 

মোকাব্বিরদের জন্যও রাখা হয়েছে লাল পতাকা সম্বলিত সুনির্দিষ্ট জায়গা। সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিনারটির আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। মাঠে অতিরিক্ত ধুলা নিরসনে ক্রমাগত মাঠ ভেজাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। মুসল্লিদের মাঠের প্রবেশের জন্য তৈরি করা হয়েছে তোরণ বা গেট। তাদের জন্য মিনারের পেছনে প্রস্তুত করা হয়েছে ওযুখানা। একইসাথে প্রস্তুত করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য করা হয়েছে জেনারেটরের ব্যবস্থা। 

দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।  ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম কৃতির সৌন্দর্য-নান্দনিক হিসেবে নির্মাণকাজ শুরু হয়। 

এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে ২টি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাবের (যেখানে ইমাম দাড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। 
পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে।

২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবার এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে করোনার প্রকোপের ফলে গত দুই বছরে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। 

এখন প্রকোপ কমে যাওয়ায় এবারে ঈদের জামাতের প্রস্তুতি নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজে ইমামতি করবেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাসেমী। সকাল ৯টায় এই জামাতের সময় দেয়া হয়েছে। 

উত্তর বালুয়াডাঙ্গা এলাকার মেহেদী হাসান সাঈদ বলেন, ‘দুই বছর বড় মাঠে ঈদের জামাত হবে। মনে হচ্ছে, কতদিন ধরে নামাজ পড়িনি ওই মাঠে। এবার ঈদের নামাজ আদায় হবে। কত যে আনন্দ তা কেবল আমিই জানি। সবার সঙ্গে নামাজ পড়তে পারব। এটা আমার কাছে সত্যিই খুব আনন্দের। বড় জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারব। এটাই তো মজার।’

দিনাজপুর পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে ঈদের জামাতকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা কর্মী পর্যাপ্ত থাকবে। ঈদগাহের চারপাশে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশও থাকবে। কঠোর নিরাপত্তার কথা ভেবে মাঠটি সিসি ক্যামরার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে শহরজুড়ে। যাতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যানবাহন শহরে ঢুকতে ও বাহির হতে কোনও সমস্যা না হয়।’

আরও পড়ুন: ঈদে বেড়াতে এসে মেঘনায় নিখোঁজ কিশোর

তিনি বলেন, এই মাঠেই থাকবে ৬৫৯ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। একইসঙ্গে প্রতিটি কাতারেই থাকবেন সাধারণ পোশাকে গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। কয়েকদিন ধরেই শহরের সব সিসি ক্যামেরাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শহর ও আশেপাশের এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। মাঠের পূর্বদিকে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। যেখান থেকে পুরো মাঠটি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। একইসঙ্গে মাঠে প্রবেশ করা প্রতিজন মুসলিকে তল্লাশি করা হবে। যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। সেজন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। 

মাঠের সবশেষ প্রস্তুতি সম্পন্নের বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ‘দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ ময়দানে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখানে নিরাপদে মুসল্লিরা যাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন, এজন্য একাধিকবার জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে। একইসঙ্গে মুসল্লিরা যাতে কোনও ধরনের সমস্যায় না পড়েন, সেজন্য বিপুলসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী মোতায়েন থাকবেন। এই মাঠে যাতে সবাই একসঙ্গে আনন্দে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন, সেজন্য সব ধর্মপ্রাণ মুসল্লিকে এই মাঠে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

সম্পর্কিত

আরও পড়ুন

×