ঢাকা বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

পেনশনের দাবিতে কলকাতায় যৌনকর্মীদের মশাল মিছিল

পেনশনের দাবিতে কলকাতায় যৌনকর্মীদের মশাল মিছিল

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ মে ২০২২ | ১৭:৪৩ | আপডেট: ০১ মে ২০২২ | ১৭:৪৮

তারা দাবি জানান, ৪৫ বছর পেরোলেই তাদের পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।  তবে ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা বলছেন, যতদিন না এই পেশা শ্রম আইনের আওতায় আসছে, ততদিন যৌনকর্মীদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করা কঠিন। তবে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলো সুবিধা অবশ্যই তাদের পাওয়া উচিত।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী বলে পরিচিত কলকাতার সোনাগাছিতে বেশ কয়েক হাজার যৌনকর্মীকে নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করছে দুর্বার নামে ওই এনজিওটি। এবারের মে দিবসের ঠিক আগে মধ্য কলকাতার অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রীট থেকে বিরাট মশাল-মিছিল বের করে তারা।এর মূল দাবিই ছিল যৌনকর্মীদেরও শ্রমিকের প্রাপ্য সব অধিকার ও অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।আর সেটার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকেই।

যে কারণে পেনশনের দাবি
দুর্বারের বর্তমান সভাপতি বিশাখা লস্কর বলছিলেন, হাজার হাজার যৌনকর্মী আজও এই ধরনের মৌলিক শ্রম-অধিকারগুলো থেকেই বঞ্চিত। তার কথায়, ‘একজন শ্রমিকের যেসব অধিকার আছে, সমতালিকায় একজন যৌনকর্মীর কাজকেও কাজ হিসেবে নথিভুক্ত করাটাই আমাদের দাবি। তাহলেই আমরা শ্রম-অধিকারগুলো পাব।’

তিনি বলেন, এই পেশায় থাকার জন্য অনেক সময় যৌনকর্মীরা রেশন কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো সাধারণ সামাজিক অধিকারগুলোও পান না। যৌনকর্মীদের সন্তানরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন না। পড়াশুনো করতে গেলে অসুবিধায় পড়েন।’

দুর্বারের সাবেক সভাপতি ভারতী দে-ও’র প্রশ্ন, সব পেশাতেই পেনশন চালু হয়েছে। তাহলে যৌনকর্মীরা কেন বঞ্চিত হবেন? তিনি বলেন, ‘আর এটা এমন একটা পেশা, যেখানে পঁয়তাল্লিশের পর আর উপার্জন করার কোনও সুযোগ থাকে না। ফলে ওই বয়সের পর সরকার তাদের ফ্রি-তে রেশন দিক ও পেনশনের ব্যবস্থা করুক। এটাই আমাদের বক্তব্য।’

কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ধরনা দিতে গিয়ে দিল্লিতেও পেনশন পরিষদে তারা একাধিকবার এই দাবি পেশ করেছেন বলে জানান ভারতী দে।

বলা সহজ, করা কঠিন?
যৌনকর্মীদের ওই সমাবেশে হাজির ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কলকাতা পৌরসভার কাউন্সিলর সুনন্দা সরকার। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের ওই নেত্রী বিবিসির কাছে প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেন-তাদের এই দাবিগুলো মানা হয়তো খুব সহজ নয়।

তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমি সেখানে শুধু আমন্ত্রিত ছিলাম। আর তারা তাদের দাবিদাওয়াগুলো প্রকাশ্য মঞ্চে সবার সামনেই তুলে ধরেছেন। কিন্তু সেগুলো নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। এখতিয়ারও নেই। আসলে গণতন্ত্রে সবারই নিজস্ব দাবি তুলে ধরার অধিকার আছে। ওনাদেরও আছে। কিন্তু সেটা কতটা সম্ভব, তা নির্ধারণ করবেন সরকার ও নীতি-নির্ধারকরাই।’

শ্রম আইনে যা আছে
বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ও সাবেক পার্লামেন্টারিয়ানও তপন কুমার সেনও বলেন, অবসরকালীন ভাতার বিষয়টি একটু জটিল। তবে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা নেটে যৌনকর্মীদের ঢুকতে না পারার কোনও কারণ নেই। তিনি বলেন, ‘টেকনিক্যালি বলতে গেলে তারা ট্রেড ইউনিয়নে সংগঠিত নন। আর ট্রেড ইউনিয়ন অ্যাক্ট অনুযায়ীও যৌনকর্মীদের কোনও রেজিস্টার্ড এনটিটি আছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। এখন শ্রম আইন তাদের ওপরই প্রযোজ্য হয়, যারা ট্রেড ইউনিয়ন আইনে রেজিস্টার্ড। এই কারণেই তারা বঞ্চিত। এটা একটা দিক।’

তার ভাষ্যমতে, দুই নম্বর বিষয়টা হলো পেনশন সাধারণ সামাজিক সুরক্ষারও অংশ। আর এই সুরক্ষাটা শুধু শ্রমিকরা নন, যারা ট্রেড ইউনিয়নের আওতায় নেই; সেসব নাগরিকেরও প্রাপ্য। তা তিনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন।

তপন কুমার সেন, এছাড়া সরকারের নানা ধরনের ওয়েলফেয়ার প্রোজেক্ট বা জনকল্যাণ প্রকল্পও আছে। একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজের নাগরিক হিসেবে যৌনকর্মীদেরও সেসব প্রকল্পের আনা দরকার। এটা তাদের ন্যূনতম সামাজিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।

ওই প্রবীণ শ্রমিক নেতা যোগ করেন, এদের 'ইউনিভার্সাল সোশ্যাল সেফটি নেটে'র মধ্যে নিয়ে আসাটা অবশ্যই সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কেউ যৌনকর্মী ছিলেন বলে সেই দাবিটা কোনও মতেই অস্বীকার করা যায় না।

'দুয়ারে সরকার' সোনাগাছিতেও
তবে কলকাতার যৌনকর্মীদের একটা বড় অভিযোগ হলো- সেখানে রাজ্য সরকার ঘরের দুয়ারে ভাতা ও উন্নয়ন পৌঁছে দেয়ার যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে, এই পেশায় থাকার জন্য তারা অনেকেই সেটা পাচ্ছেন না।

স্থানীয় কাউন্সিলর সুনন্দা সরকার অবশ্য সেই কথা মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘দুয়ারে সরকার প্রকল্পের সব সুবিধাই ওনারা পাচ্ছেন। যৌনকর্মীদের যার কাছে যেটুকু ডকুমেন্টস আছে। যেমন আধার কার্ড, রেশন কার্ড, এর ভিত্তিতে এগুলো আমরা সব সময় করে দিই।’

সুনন্দা সরকার বলেন, ‘এখন ধরুন বাইরে থেকে কেউ এলো। বাংলাদেশ থেকে এসে মাত্র এক সপ্তাহ আগে সোনাগাছিতে ঢুকেছে। তার কোনও কাগজপত্র নেই বলে ওই কেসগুলো কিছু করতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি পশ্চিমবঙ্গ সরকার মহিলাদের জন্য যেসব উন্নয়নমুখী সামাজিক কর্মসূচি নিয়েছে, সেগুলোর সবই ওরা পাচ্ছেন। শুধু ওরকম দু-একটা ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে যেখানে আমরা একেবারে অপারগ।’

বস্তুত যৌনকর্মীদের পেশার চরিত্রটাই এমন যে অন্যান্য চাকরির তুলনায় অনেক আগেই তাদের অবসরে চলে যেতে হয়। কিন্তু ভারতে যৌনকর্মীদের অবসরের পর পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার স্বপ্ন সত্যি হতে এখনও আসলে অনেক দূরের রাস্তা পাড়ি দেয়া বাকি।

সম্পর্কিত

আরও পড়ুন

×