ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

নিজের দায়বদ্ধতা থেকে শ্রমিকদের নিয়ে গান করেছি: মনির খান

নিজের দায়বদ্ধতা থেকে শ্রমিকদের নিয়ে গান করেছি: মনির খান

মনির খান

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ মে ২০২২ | ০৭:১২ | আপডেট: ০১ মে ২০২২ | ০৭:৫১

✪ ঈদ কোথায় করবেন?
ঈদ গ্রামের বাড়ি করব। ওখানে আমার মা আছে। এবার আমরা সব ভাই-বোন একত্র হচ্ছি। সময় সুযোগ হলে ঈদ ছাড়াও গ্রামের বাড়ি যাই। পরিবারকে সময় দেই। গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ খবর নেই।

মনির খান

✪ ছোট বেলার ঈদ সম্পর্কে বলবেন?
ছোট বেলার ঈদের আনন্দ আর এই বয়সের ঈদের আনন্দ আলাদা। ছোট বেলায় ঈদের সময় সবার কাছে যেতাম, সালাম করতাম, সালামি পেতাম। ভালো লাগতো। আর এখন তো আমাকে ছোটরা সালাম করে, তাদের সালামি দিতে হয়। সময় ও বয়সের কারণে, বাস্তবতার আলোকে এক সময় সালামি নিয়েছি আর এখন সালামি দিচ্ছি। ছোট বেলায় সবার স্নেহ-ভালোবাসায় ছিলাম। এখন নিজে ছোটদের স্নেহ করি, আদর করি।

✪ তারকা হওয়ার আগে ও পরে ঈদের বিষয়ে জানতে চাই...
সেই সময় স্বাভাবিক একটি জীবন কেটেছে। জীবনের প্রকৃত অর্থও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। সবকিছুই বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। এখন অনেক কিছুই ভাবতে হয়। একটা অর্জন মানুষকে অনেক দায়বদ্ধ করে তোলে। সে ক্ষেত্রে তখন ছিল আমার অর্জনের সময়। অর্জনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছি। আর এখন মহান আল্লাহ যতটুকু অর্জন করার ক্ষমতা দিয়েছে তা ধরে রেখে আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করি। আগে ঈদে বন্ধুদের সঙ্গে মিশেছি, হই হুল্লোড় করেছি। তখন মানুষের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে ছিলাম না; সাধারণ হিসেবে ছিলাম। কিন্তু যখন মনির খান হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিতি পেলাম, মানুষের পছন্দের মানুষ হিসেবে হৃদয়ে জায়গা পেলাম, তখন কিছু মানুষ তো চাইবেই তার ভালো লাগার মানুষের পাশে দাঁড়াবে। একটু কথা বলবে, জড়িয়ে ধরবে, তা ফ্রেমবন্দি করবে। এটা আমি উপভোগ করি।

মনির খান

✪ গ্রামে যাওয়ার পর অনেক মানুষ আপনাকে দেখতে আসে...
আমাকে দেখার জন্য অনেক মানুষ আসে বাড়িতে। এর জন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আমি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি। প্রতিবারই গ্রামে যাই। আর আমাদের দেশে কোটি কোটি মানুষ। তার মধ্যে আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসা, আমাকে তাদের ভালো লাগা, এটা আমার জন্য বিশাল কিছু। আমি গ্রামে যাওয়ার পর যারা দেখা করতে আসেন তাদের সঙ্গে কথা বলি, আড্ডা দেই। একটু চা চক্রের মাধ্যমে সময় কাটাই। নদীর পাড়ে ছোট একটি বাজার আছে, সেখানে বসে সবার সঙ্গে গল্প করি। এই জীবন ভীষণ ভালো লাগে আমার কাছে।

✪ গ্রামের মানুষদের নিয়ে মজার কোনো স্মৃতি আছে?
অসংখ্য স্মৃতি আছে। সব তো বলে শেষ করা যাবে না। এর মধ্যে কিছু কথা না বললেই নয়, গ্রামের কিছু মানুষ তাদের পছন্দের পিঠা, বিরিয়ানি ও অন্য সব খাবার রান্না করে নিয়ে আসে আমার জন্য। গাছে কোনো ফল ধরেছে, তা আমার জন্য নিয়ে আসছে। যেমন- অনেকে ডাব, আম, পেয়ারা ও পেঁপেসহ নানা রকমের ফলমূল নিয়ে আসে। তারা অপেক্ষায় থাকেন কবে আমি গ্রামে আসব। তাদের সঙ্গে বসে সেসব ফল-খাবার একটু খাই, কথা বলি। খাওয়ার পর তাদের চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ দেখতে পাই। কেউ কেউ আবার খাওয়ায়ে দিতে চায়। আবার কেউ আমার জন্য পোশাক নিয়ে আসে। আমি চেষ্টা করি সবার কথা রাখতে।

মনির খান

✪ প্রিয় খাবার কী?
আমি সবকিছু খেতে পছন্দ করি। আমার মধ্যে অতিরিক্ত কোনো চাহিদা নেই, এটা ভালো লাগে এটা তৈরি করতে হবে। আমি এমন না। আর আমি ঈদে একটা কাজ করি, নামাজ শেষে ঈদগাহ থেকে ফেরার সময় সব বন্ধুদের নিয়ে বাড়ি ফিরি। মা জানে, আমার ছেলে সবাইকে নিয়ে আসবে। মা ঈদের আগের দিন শোনে, ঈদের জামাত কয়টায়; আমি বলি। সেইভাবে মা সেমাই, পায়েস, লুচিসহ সব ধরনের খাবার রান্না করে। কিন্তু এখন আর মা সেই আগের মতো পারে না। বয়স হয়েছে তো। তবে আমার ভাবিরা আছে, তারা রান্না করেন। এছাড়া এর মধ্যে বাড়তি একটি হচ্ছে হকদানা। এটা হচ্ছে খিচুড়ির সঙ্গে মুরগির মাংস। আমাদের বাড়িতে বড় পাতিলে করে রান্না করা হয় এই খাবার। একটু লুচি-সেমাই খাওয়ার পর সবার সঙ্গে হকদানা খাই আমরা। আবার বন্ধুদের বাসায় যাই। দুপুর পর্যন্ত এভাবে ঘোরাঘুরি করি আমি।

✪ আপনার ছেলে-মেয়ে গ্রামে দিনগুলো কীভাবে কাটায়?
গ্রামে যাওয়ার পর ওরা তো ওদের চাচাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে মিশবে, ঘোরাঘুরি করবে। যদিও সবাই এক বয়সী না, তবে কাছাকাছি। চাচাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে ওদের দারুণ সখ্যতা, মিল। সবাইকে কাছে পাওয়ার আনন্দ, একে অপরে খুব উপভোগ করে। ওরা গ্রামে বেড়ায়, গ্রাম বেশি পছন্দ করে। আবার মেয়ের ছবি তোলার শখ বেশি। মেয়ে আমাকে বলে, বাবা আমাকে একদিন তোমার গাড়ি দিতে হবে। আমি ছবি তুলব, ঘুরব। এলাকার কোথায় কোথায় ভালো জায়গা আছে সেখানে যাব। তখন আমি গাড়ি দেই। মা এখন আর ওদের সঙ্গে যেতে পারে না। গত বছরও গেছে। তো ওরা ওদের সব ভাই-বোনসহ ঘুরে বেড়ায়। নদীর পাশে, সুন্দর রাস্তা, বাগান, ধান ক্ষেতসহ বিভিন্ন শস্য ক্ষেতে ছবি তুলে। সারাদিন ঘোরাঘুরি শেষে রাতে আবার আমাকে সে সবের ছবি দেখাবে। আবার ওরা নিজেরা পিকনিক করে বা বারবিকিউ পার্টি করে। এসব আবার আমাকেই অ্যারেঞ্জ করে দিতে হয়। ছেলে-মেয়েদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এই বিষয়গুলো খুব আনন্দদায়ক (হাসতে হাসতে)।

স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে মনির খান

✪ ক’দিন আগে দেশে ফিরলেন। কী উপলক্ষে বাইরে যাওয়া হয়েছিল?
করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথাও যাওয়া হয়নি। করোনায় তো আমাদের সবাইকে ঘরবন্দি সময় কাটাতে হয়েছে। আবার মেয়ের পরীক্ষা শেষ হলো। তাকে কোথাও ঘুরতে নিতে পারিনি। মা-বাবার কাছে সন্তানের তো ছোট ছোট কিছু চাওয়া বা আবদার থাকে। আবার ঈদ। এ কারণে একটু ইন্ডিয়া যাওয়া। ওদের ঘোরাঘুরিও হলো, কেনাকাটাও হলো। এছাড়া ডাক্তার দেখানোরও প্রয়োজন ছিল।

✪ আপনার গান পছন্দ, ছেলে-মেয়েদের কী?
আমারও যেমন গান পছন্দ তেমনি আমার দুটি সন্তানেরও গান পছন্দ। তবে আমি গানের মানুষ বলে চর্চা করি, কিন্তু ওরা তা করে না। কোন গানটি ভালো, কোনটির কথা সুন্দর তা বুঝতে পারে। ওদের কাছে যে কোনো নির্দিষ্ট শিল্পী পছন্দের রয়েছে তা নয়। যখন যে গান ভালো লাগে সেই গান শুনে।

স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে মনির খান

✪ এবারের রমজানে দুটি ইসলামিক গান প্রকাশ হয়েছে আপনার...
এর আগেও একটি ইসলামিক গানে কণ্ঠ দিয়েছি। গত বছরই তা প্রকাশ হয়েছে। আমরা মুসলমান জাতি, রমজানে তো কেউ গান পছন্দ করে না। কম-বেশি সবাই ইসলামিক গান শুনে এই মাসে। শ্রোতাদেরও চাওয়া ছিল আমি যেন ইসলামিক গান করি। আবার রমজান, একটা উৎসব। সব সময় তো উৎসব-আয়োজনকে কেন্দ্র করে গান করা হয়। সেই জন্য এবার রমজানকে কেন্দ্র করে ইসলামিক গান করা। আর এখন থেকে প্রতি রমজানেই শ্রোতাদের জন্য ইসলামিক গান করার চেষ্টা করব। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

✪ এই ঈদে নতুন কী গান আসছে?
বেশ কয়েকটি গানে কণ্ঠ দিয়েছি আমি। গানগুলো বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে আসবে। আর আমার নিজের ‘এমকে মিউজিক ২৪’ চ্যানেলে ‘আমার সাথে করলি কেন ছল’ শিরোনামের একটি গান প্রকাশ হয়েছে। গীতিকার আলম সিদ্দিকীর কথায় গানটির সুর করেছেন মিল্টন খন্দকার। শ্রোতাদের কাছে গানটি অনেক ভালো লাগবে বলে বিশ্বাস আমার।

মনির খান

✪ আজ ১ মে, বিশ্ব শ্রমিক দিবস...
এদিন শ্রমিক দিবস। পৃথিবীতে আমরা যারা এসেছি তারা সবাই শ্রমিক। যিনি শিল্প-কারখানার মালিক তিনিও শ্রমিক, যিনি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনিও শ্রমিক। কেউ যদি নিজেকে মালিক বলেই দাবি করেন তাহলে আমার মতে তার ধারণা ভুল। কারণ, আমি যে কাজটা করি সেটার জন্য আমি অবশ্যই শ্রমিক। আমি নিজেও একজন কণ্ঠশ্রমিক। এই শ্রমিকদের কারণে দেশ আজ উন্নত হচ্ছে। আমি মনে করি, কে মালিক কে শ্রমিক এই ভেদাভেদ না রেখে সবার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। পরস্পর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা থাকা উচিত। সবার কাজকে শ্রদ্ধা করা উচিত। কোনো কাজ বা মানুষই ছোট নয়। এতে সম্পর্ক ভালো হওয়ার পাশাপাশি কাজের প্রতি সবার আগ্রহ বাড়বে। দেশ-জাতি সবারই উন্নয়ন হবে। আমার সব শ্রমিক ভাই-বোন ও শ্রোতাদের প্রতি অনেক অনেক ঈদের শুভেচ্ছা।

আরও পড়ুন: অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছি, পুরস্কার পাইনি: তৌসিফ

✪ পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে আপনার একটি গান রয়েছে...
আমি গার্মেন্টেসে প্রচুর প্রোগ্রাম করি। প্রোগ্রামের কারণে অনেক গার্মেন্টেসে যাওয়া হয় আমার। যতবার গেছি লক্ষ্য করেছি সেখানে আমার গান বাজছে। সেখানকার শ্রমিকরা বলে, স্যার, আমরা ৮ ঘণ্টা কাজ করলে ৬ ঘণ্টা আপনার গানই শুনি। আপনার গানে নিজেদের না বলা কথা, আবেগ-অনুভূতি শুনতে পাই। ভীষণ ভালো লাগে। একবার তারা বলল, স্যার, আমরা সুই-সুতা নিয়ে কঠিন গরমে, প্রচণ্ড শীতে কাজ করি। আমাদের নিয়ে কি কিছু করা যায়? তখন খেয়াল করি, কোমলমতি শিশুরাও সেখানে কাজ করে। যাদের শ্রম দেয়ার মতো বয়স হয়নি, স্কুলে থাকার কথা, মা-বাবার আদর-স্নেহে থাকার কথা। কিন্তু তারা পেটের দায়ে, দু’মুঠো ডাল-ভাতের জন্য কাজ করছে। ওদের কথা মনে পড়তেই হৃদয়টা দুমরে-মুচড়ে যায় আমার। তখন ভাবলাম, আসলেই তো ওদের জন্য আমার জায়গা থেকে কিছু করা উচিত। ওদের পরিশ্রমে তৈরি পোশাক বিদেশ রপ্তানি হয়ে দেশের রাজস্ব বাড়ে। ওরা একপ্রকার ঘরবন্দিও বলা যায়। ডিউটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অফিসেই থাকতে হয়। খুব সতর্ক দৃষ্টিতে কাজ করতে হয় তাদের। এরপর নিজের দায়বদ্ধতা থেকে বিষয়টি নিয়ে গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার চাচার সঙ্গে কথা বলি। তারপর তিনি ‘তোরা গার্মেন্টস শ্রমিক, আমি কণ্ঠশ্রমিক’ গানটি লিখেন। এটি ‘কেয়ামত’ অ্যালবামের গান। এরপর গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

সম্পর্কিত

আরও পড়ুন

×