ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

স্ত্রী উপার্জন করেন, স্বামী সামলান সংসার, যত প্রশ্নের মুখে তারা

স্ত্রী উপার্জন করেন, স্বামী সামলান সংসার, যত প্রশ্নের মুখে তারা

ছবি সংগৃহীত

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২২ | ১৪:০৬ | আপডেট: ০৬ মে ২০২২ | ১৪:৪০

তবে নিজের কাজের ধরন ও পরিবেশে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয় রিয়াদের। একপর্যায়ে চাকরিটি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ নিয়ে বাড়িতে আলাপ করেন তিনি। তাতে অকুণ্ঠ সমর্থন দেন তার স্ত্রী ও মা।

শেষমেষ চাকরি ছেড়ে দেন রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরুর বছর খুব কাছাকাছি সময়ে আমার দুই চাচা মারা যান। ছোট ভাই অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে। বোন ডাক্তার, সে থাকে কক্সবাজার। তাহলে বাবা-মাকে দেখবে কে?’

রিয়াদ বলেন, ‘ওই সময় মনে হয়, আমার ছেলেকে দেখে দুঃখ ভুলতে পারেন বাবা-মা। ছেলে আমাকে পুরোটা সময় পাবে। এছাড়া সিনেমা নিয়ে আগ্রহ আছে আমার। প্রতিদিন কাজের চাপ সৃজনশীলতা নষ্ট করে। চাকরি ছেড়ে দিলে তা নিয়ে কাজ করতে পারব।’

রিয়াদের স্ত্রী নাজিয়া আমির সরকারি চাকরি করেন। তার পোস্টিং দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি জেলায়। তিনি সেখানে থাকেন। আর চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রামে পরিবারের সঙ্গে থাকতে চলে যান রিয়াদ। 

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেসময় থেকে সংসারের অর্থনৈতিক দিকটির দায়িত্ব নেন নাজিয়া। আর বাবা-মা-সন্তানের দেখাশোনা এবং পছন্দসই শিল্প-সাহিত্যের চর্চা করে দিন কেটে যায় রিয়াদের। এখন নিজেকে নির্ভার আর আনন্দিত মনে হয় তার। পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও বোঝাপড়া ভালো। 

তবে চারপাশের মানুষ রিয়াদ ও তার স্ত্রীর সিদ্ধান্ত সহজে মেনে নেয়নি। সঙ্গত কারণে নানাবিধ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাদের।

নাজিয়া বলেন, পরিবারের লোকদের কাছ থেকে নয়। প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বাইরের মানুষের কাছে। ঢাকা ছেড়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে চট্টগ্রামে এলে এবং পরে কর্মস্থলে গেলে নানামুখী প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। 

যেসব প্রশ্নে বিদ্ধ হতে হয়, সেসব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনার স্বামী এখন কী করেন? ওহ আচ্ছা, তাহলে হি ইজ নট আর্নিং এনিমোর! আপনিই ফ্যামিলির একমাত্র আর্নিং পার্সন? সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, সেটি হচ্ছে আপনি কেন বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে থাকছেন না?’ 

সংসারের সব বিষয়ে রিয়াদ-নাজিয়ার বোঝাপড়া ভালো। যেকোনও কাজ ও সিদ্ধান্ত আলোচনা করে করেন তারা। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, লোকের কথায় পরিবারে বা দাম্পত্যে কোনও চাপ তৈরি হয় কি-না?

জবাবে নাজিয়া বলেন, ‘স্বামীর কাজ ও চিন্তার প্রতি আমার সম্মানবোধ আছে। তাই আমাদের বোঝাপড়ায় কোনও সমস্যা নেই। অধিকন্তু সংসারে রোজগারের দায়িত্ব সবসময় পুরুষকেই নিতে হবে-এমন ধারণাকে আমি সমর্থন করি না।’

তিনি বলেন, ‘একটা সময় আমি বেকার ছিলাম। আমার স্বামী চাকরি করতেন। এখন উল্টো। উনি প্রত্যক্ষভাবে কোনও চাকরি-বাকরি করছেন না। আমি করছি। কখনও এই স্টেরিওটাইপড চিন্তায় বিশ্বাসী ছিলাম না।’

পেশায় প্রকৌশলী এ নারী বলেন, ‘আমার মনে হয়, দুজনই একসঙ্গে ব্রেডআর্নার, হোমমেকার হতে পারেন। আবার যেকোনও একজন যেকোনও একটা হতে পারেন। স্ত্রী উপার্জন করবেন, স্বামী সংসার দেখবেন বা উল্টোটাও হতে পারে। আবার স্বামী এমন কিছু করবেন যাতে রেডিলি অর্থ উপার্জন হয় না। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকলে বাইরের লোকের এ বিষয়ে কিছু বলা উচিত নয়।’

সংসারে রান্নাবান্নার মতো খুঁটিনাটি কাজ করেন না রিয়াদ। তবে ছেলের যাবতীয় দেখাশোনা করেন তিনি। ছুটিতে তার স্ত্রী বাড়ি আসেন কিংবা একসঙ্গে বেড়াতে যান তারা। 

পরিবারের সমস্যা না থাকলেও এ ধরনের পরিবারের কাঠামো নিয়ে সমাজের লোকেরা প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু কেন? এরকম পরিবার দেখতে আমরা অভ্যস্ত নয় বলে? নাকি সমাজের চিরাচরিত নিয়ম পুরুষ উপার্জনকারী, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হবেন- সেই ধারণার চেয়ে আলাদা বলে?

জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সানজিদা নীরা বলেন, এটি পুরোপুরি দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। সেটা পরিবর্তন হতে সময় লাগবে। অনেক ক্ষেত্রে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হচ্ছে। তাতে আস্তে আস্তে এটাও নরমালাইজ হবে। নারীর দীর্ঘ সময় কর্মক্ষেত্রে থাকা যত স্বাভাবিক হবে, তত অন্য বিষয়ও স্বাভাবিক হবে। পুরুষ রান্না বা ঘরের কাজ করলে সমস্যা হয় না, এ উদাহরণ বেশি সৃষ্টি হলেই সমাজে পরিবর্তন আসবে।

তিনি বলেন, সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো বদলে যাচ্ছে। তবে সে অনুপাতে সমাজের মনোভাব নারীর ইস্যুতে বদলায় না। তাই পরিবর্তনের জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতেই হবে।

সম্পর্কিত

আরও পড়ুন

×