ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

পশু চিকিৎসক সিজার করলেন প্রসূতির, মা-ছেলের মৃত্যু

পশু চিকিৎসক সিজার করলেন প্রসূতির, মা-ছেলের মৃত্যু

ফাইল ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২২ | ০৮:৪১ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ | ১৭:৫৯

বুধবার (৪ মে) দুপুর ২টার দিকে ওই উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রসূতি শরীফা একই গ্রামের বাক প্রতিবন্ধী হাইছ উদ্দিনের মেয়ে। 

আরও পড়ুন: ঈশ্বরদীতে সড়ক ঝরলো দুই প্রাণ

অভিযুক্ত ওই পশু চিকিৎসক হলেন একই উপজেলার জীবনপুর গ্রামের আবুল কাশেম। তিনি স্থানীয় এলাকার একজন পশু চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। 

স্থানীয়রা জানায়, কিছুদিন ধরে তিনি পশুর পাশাপাশি মানুষের চিকিৎসাও করেন। আবুল কাশেম গেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে হেরে যান। 

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শরীফা বারহাট্টা সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেছেন। গত বছর পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর এলাকায় বিয়ে হয় শরীফার। তার স্বামীর নাম মহসিন মিয়া। সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে গত সপ্তাহে স্বামীর বাড়ি থেকে চন্দ্রপুর বাবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

বুধবার ঘটনাটি ঘটার পর উপস্থিত লোকজন ওই পশু চিকিৎসকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে মারমুখী হয়ে উঠলে কয়েকজন ওই চিকিৎসককে বাড়ির পেছন দিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

ভুক্তভোগীর মা মাফিয়া আক্তার খাতুন বলেন, সকালে শরীফার প্রসব ব্যথা শুরু হলে কাশেম ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়। তিনি রোগীকে দেখে বললেন, সবকিছু স্বাভাবিক আছে কোনও সমস্যা নাই। আমরা নেত্রকোনা নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার কথায় ভরসা পেয়ে আর নেইনি। পরে এক পর্যায়ে তিনি সিজার করেন। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফার মৃত্যু হয়। 

শরীফার চাচা গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালাম বলেন, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ছাড়াই শরীফার সিজার করে ফেলেন। পরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে একজনকে ওষুধ আনতে পাঠানো হয় মোহনগঞ্জে। অনেক দূরের পথ হওয়ায় ওষুধ নিয়ে আসতে আসতেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফার মৃত্যু হয়। এদিকে টানা হেঁচড়া করতে গিয়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া ছেলে সন্তানেরও মৃত্যু হয়। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য লালন বখত মজুমদার বলেন, কাশেম একজন পশুর ডাক্তার। তার অনিয়ম বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই। না হলে আরও অনেকেই এভাবে ভুক্তভোগী হবে।

বারহাট্টার সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসিম তালুকদার বলেন, একজন পশুর চিকিৎসকের মানুষের চিকিৎসা, বিশেষ করে সিজার করা তো তার একেবারেই উচিত হয়নি।

অভিযুক্ত পশু চিকিৎসক আবুল কাশেম সিজারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সিজারের পর ওষুধ আনতে পাঠানো হয়েছিল। দূরের পথ ওষুধ ও সেলাই আনতে দেরি হওয়ার এ ঘটনা ঘটেছে। তবে শুধু পশু নয় মানুষের চিকিৎসার সনদ ও তার আছে বলে দাবি করেন তিনি। দীর্ঘদিন থেকে মানুষের চিকিৎসা করছেন বলেও জানান তিনি। 

মোহনগঞ্জ  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসর (আরএমও) ডা. শাহরিয়ার জাহান ওসমানি বলেন, সিজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি এমবিবিএস ছাড়া কারও করার নিয়ম নেই। 

বারহাট্টা থানার ওসি লুৎফুল হক বলেন, এ বিষয়ে কেউ কিছুই জানায়নি। আপনার কাছেই এটি প্রথম শুনলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

আরও পড়ুন

×