ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

ঈদ আনন্দ সবার

ঈদ আনন্দ সবার

ঈদ আনন্দ

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২২ | ০১:১২ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ | ১৭:৫৯

মঙ্গলবার (৩ মে) ঈদুল ফিতরের দিন দুপুরে ফরিদপুর সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা) গিয়ে দেখা যায়, নতুন জামা কাপড় পরে একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছে বাবা-মা হারা শিশু-কিশোরীরা।

আরও পড়ুন: ঈদের দিন সড়কে প্রাণ গেল ১৩ জনের

শিশু-কিশোরীরা যেন অন্যদের মতো ঈদ উদযাপন করতে পারে, সেজন্য সরকারি শিশু পরিবারের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়।

জানা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ফরিদপুর সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) শহরের টেপাখোলায় অবস্থিত। এখানে ১৭৫ জন শিশু-কিশোরী রয়েছে। তাদের অনেকেই জানে না কে তার বাবা-মা। আবার অনেকের বাবা নেই, আবার কারও মা নেই, আবার কারও বাবা-মা কেউই নেই। এসকল শিশু-কিশোরীদের থাকা-খাওয়া, পড়ালেখাসহ যাবতীয় ব্যবস্থা এখান থেকেই করা হয়। প্রথম শ্রেণি থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত অধ্যয়নরত রয়েছে এখানকার মেয়েরা।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এ সকল শিশু-কিশোরীদের দেওয়া হয়েছে নতুন জামা-কাপড়। ঈদের দিন দুপুরে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। খাবারের মধ্যে ছিল পোলাও, মুরগীর রোস্ট, গরুর মাংস, ডাল, সালাদ, দই, মিষ্টি, আইসক্রিম, সেভেন আপ। খাবার ট্রেতে সাজিয়ে রাখা হয়, যে যার মত যে পরিমাণ ইচ্ছা মত খেতে পেরেছে তারা।

সরকারি শিশু পরিবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী কিশোরী মানসুরা জানায়, শিশুকাল থেকে এখানেই রয়েছে। তার বাবা-মা কেউ নেই। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে। ঈদ কেমন কাটল প্রশ্নের জবাবে মানসুরা বলে, খুব ভালো কেটেছে ঈদের দিন। ঈদের আগের দিন নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন সকালে সেমাই, রুটি, খিচুরি খেতে দেওয়া হয়েছে। দুপুরে পোলাও, মাংস, দই, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হয়েছে। সবার সঙ্গে মিলেমিশে ঈদ পালন করলাম।

মানসুরা আরও জানায়, পরিবারের কেউ নেই একথা ভুলে গেছি। এখানে যিনি দায়িত্বে আছেন তাকে আমরা মা বলে ডাকি। আমাদের সকলকে খুব যত্ন করেন তিনি। আমাদের খুব খেয়াল রাখেন। 

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া জানায়, এখানে সবাই মিলেমিশে থাকি। থাকা-খাওয়া, পড়ালেখা, খেলাধুলা সবই করতে পারি। ঈদের দিন খুব আনন্দে কাটল। অনেক মজা করেছি। হাতে মেহেদি লাগিয়েছি, সেজেছি, নতুন পোশাক পড়ে সবার সাথে গল্প করেছি। দুপুরের খাবার খেয়েছি। খাওয়ার পর মা (তত্ত্বাবধায়ক) আমাদের সবাইকে বকশিস দিয়েছেন।

১ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদা জানায়, আমি ছোট বলে অন্যরা আমাকে খুব আদর করে। বাড়ির কথা মনে নেই, এটাই আমার বাড়ি। আমি আমার বাড়িতেই ঈদ করেছি। মা-বোনদের সঙ্গে ঈদের দিন খুব মজা করেছি। 

ফরিদপুর সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) এর তত্বাবধায়ক তাসফিয়া তাছরীন বলেন, এখানে ১৭৫ জন শিশু ও কিশোরী রয়েছে। ১ম শ্রেণি থেকে ডিগ্রিতে পড়ালেখা করছে এমন মেয়েরাও রয়েছে। যারা খুব ছোট বয়সে এখানে এসেছে এদের মধ্যে অনেকেই ডিগ্রী পড়ছে, কেউ ম্যাটসে পড়ছে। 

তিনি আরও বলেন, এখানকার কারোই বাবা-মা নেই। ওরা আমাকে মা বলে ডাকে। পেশাগত দায়িত্ব পালনই নয়, মা হিসেবে ওদের আবদারগুলো পূরণ করার চেষ্টা করি। ঈদে অন্য শিশুরা যেমন আনন্দ ফুর্তিতে কাটায় ঠিক সেভাবেই যাতে ওরা আনন্দে দিনটি কাটাতে পারে সেজন্য নানান ধরনের আয়োজন করা হয়ে থাকে। নতুন কাপড়, উন্নতমানের খাবার এমনকি বাবা-মা যেমন তাদের সন্তানদের ঈদে বকশিস দেয় ঠিক তেমনি আমিও তাদের হাতে নতুন টাকা বকশিস হিসেবে তুলে দিয়েছি। নিজের সন্তানের মতো করে ওদের দেখাশুনা করি। 

তত্বাবধায়ক তাসফিয়া তাছরীন আরও বলেন, এখানে থাকার জন্য উন্নতমানের বেড রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার পরিবেশন করা হয়। পড়ালেখার জন্য রয়েছে লাইব্রেরি, খেলাধুলার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এখানকার সকলেই পড়ালেখা করে। পার্শ্ববর্তী নুরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে এখানকার কর্মচারীদের দিয়ে তাদের স্কুলে পাঠানো হয়, স্কুল শেষে তাদের আবার নিয়ে আসা হয়। এছাড়া অনেকে লজ্জায় কিছু বলতে না পারলে তার জন্যও রয়েছে ‘ইচ্ছাপূরণ’ বক্স। ইচ্ছার কথা কাগজে লিখে ওই বক্সে রাখলে আমরা তার ইচ্ছাপূরণ করে থাকি।

ফরিদপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুল হুদা বলেন, শিশু-কিশোরীরা আমাকে বাবা বলে ডাকে। তাই নিজের সন্তানের মতো করে ওদের লালন পালন করছি। অনেক সময় সরকারি বরাদ্দ না থাকলেও নিজের অর্থ দিয়ে ওদের আবদার মেটাই। 

তিনি আরও বলেন, এখানে যারা আছে সবাই খুবই ভালো। ঈদ ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়ে ওদের একটু আনন্দ দিতে নানান আয়োজন করে থাকি। এখান থেকে পড়ালেখা শেষে করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে। তাদের দেখলে নিজের কাছে খুব ভালো লাগে। 

আরও পড়ুন

×