ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

‘পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার পর ঈদের আনন্দ বুঝতে পারিনি’

‘পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার পর ঈদের আনন্দ বুঝতে পারিনি’

মাসুম আজিজ

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ মে ২০২২ | ১৪:৪০ | আপডেট: ০২ মে ২০২২ | ১৭:৩১

সোমবার (২ মে) ‘চ্যানেল 24 অনলাইন’-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন ছোট পর্দার গুণী অভিনেতা মাসুম আজিজ।

এই অভিনেতা বলেন, জানুয়ারির ২ তারিখে ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়েছে। এরপর ঢাকা শহরের প্রায় সবগুলো ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের দেখিয়েছি। ফাইনালি স্কয়ার হাসপাতালে ডাক্তার সৈয়দ আকরাম সাহেবের অধীনে ৬টি কেমো থেরাপি ও ৩০টি রেডিয়েশন নেই। এসব শেষ হয়েছে। কিন্তু এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য গত ১৮ এপ্রিল মুম্বাই যাই।

মাসুম আজিজ

তিনি বলেন, টাটা হসপিটালের চিকিৎসকরা সব দেখার পর জানান- চিকিৎসা ঠিক আছে। কোনও অসুবিধা নেই। এরপর তারা একটি চিকিৎসা পদ্ধতি বলে, যেটা বাংলাদেশ থেকে নিতে পারব আমি। তারা পেট সিটি স্ক্যান করার কথা জানিয়েছে। কিন্তু সেটার সময় এখনো আসেনি। এটা বাংলাদেশে করতে পারব আমরা। আর এটি করতে ৭০ দিন সময় লাগবে।

চিকিৎসার বিষয়ে এই অভিনেতা বলেন, ঈদের পর পেট সিটি স্ক্যান করলে বুঝা যাবে পরিস্থিতি কী? কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে, রেডিয়েশনের প্রভাবে খেতে পারছি না, কোমরে ব্যথা, ঘুম হয় না, অ্যাসিড হয়। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলে বলা হয় এসব রেডিয়েশনের প্রভাব। মাঝে কিছুদিন কিছুই খেতে পারিনি, পানিও না। তবে এখন একটু একটু করে খেতে পারি।

ক্যানসার একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। সাধারণত এই চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। এ জন্য গত কয়েক মাসের চিকিৎসায় কোনও অর্থ কষ্ট হচ্ছে কিনা⎯ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো তা হয়নি। আসলে ক্যানসারের চিকিৎসা খুব কষ্টেরই। বাংলাদেশের চিকিৎসাতেই আমার ১৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আবার ভারতে গেছি, সেখানে যাওয়া-আসা ও চিকিৎসাসহ সব মিলে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ক্যানসার মানেই হলো টাকা। যতদিন টাকা আছে ততদিন চিকিৎসা আছে।

মাসুম আজিজ

সম্পূর্ণ চিকিৎসার খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের চিকিৎসকরা ইমিউনো থেরাপির কথা জানিয়েছে। এই থেরাপি দিতে গেলে প্রতি তিন সপ্তাহে একটি করে ইনজেকশন দিতে হবে। যার দাম দুই লাখ টাকা করে। যা এক বছর দিতে হবে। কিন্তু এটা আমি নেব না। এটা নিতে গেলে আমার পরিবার পঙ্গু হয়ে যাবে। আর আমার কাছে এত টাকা নেইও। তবে টার্গেটের থেরাপি নিচ্ছি। এটাও খুব কষ্টের। এটা আমাকে বিকন ফার্মেসি থেকে স্পন্সর করেছে।

বর্ষীয়ান এই অভিনেতার কাছে প্রশ্ন ছিল⎯ শারীরিক এই পরিস্থিতিতে ইন্ডাস্ট্রি ও এর বাইরে থেকে কেউ কোনও যোগাযোগ করছে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, কেউ কেউ দেখতে আসে। আবার কেউ কেউ মোবাইল ফোনে খোঁজ-খবর নেন। তবে আমার দলের লোক ও ওস্তাদ মামুনুর রশিদ আমার খোঁজ নেন। তবে কে খোঁজ নিলো-না নিলো এ নিয়ে কখনো মন খারাপ হয় না।

আমি কাজের মানুষ। কাজ না করে ঘরে শুয়ে-বসে আছি। এটা আমার কাছে ভালো লাগে না। আমার কাছে মনে হয়, এর থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো। এভাবে বেঁচে থাকার কোনও অর্থ আছে? যদিও এর মধ্যে কাজের প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু অসুস্থ থাকায় বাড়ি থেকে আমার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিষেধ করেছে। তারা কোনোভাবেই যেতে দেয় না আমাকে। যে কারণে কাজ করা হয়নি বলে জানান মাসুম আজিজ।

মাসুম আজিজ

ঈদের সময় এই অভিনেতার সঙ্গে আলাপ হওয়ায় ছোট বেলার ঈদ নিয়েও স্মৃতিচারণ করেন এই অভিনেতা। এ সময় তিনি পছন্দের খাবারের বিষয়ে বলেন, ভুনা খিচুড়ি আর গরুর মাংস আমার প্রিয় খাবার। আমরা ছয় ভাই ছিলাম, এখন দুই ভাই আছি। তখন ভোরে ঘুম থেকে উঠে সবাই একত্রে গোসল করতাম। মায়ের হাতের রান্না করা খিচুড়ি আর গরুর মাংস খেয়ে আমরা সব ভাই বাবার নেতৃত্বে একসঙ্গে নামাজ পড়তে যেতাম। আর এসে সেমাই খেতাম। দিনগুলোর কথা খুবই মনে পড়ে।

ছোট বেলার কথা বলতে গিয়ে সামাজিক বন্ধনের প্রসঙ্গও তুলেন তিনি। জানান, সেই সময় কেবল পারিবারিক বন্ধন নয়, সামাজিক বন্ধনও বেশ অটুট ছিল। এটা হচ্ছে সবচেয়ে মজার বিষয়। এখন তো ঈদে দাওয়াত করতে হয়। কিন্তু আমাদের সেই ছোট বেলার সময় কখনো দাওয়াত করতে হতো না। সবাই তার চেনা-জানা বাড়িতে যখন খুশি গেছে, খেতে মন চাইলে তারা খেয়েছে। এখন তো তা না। ঈদের দিন কেউ আসে না। আর ঢাকায় তো এমনটা দেখাই যায় না।

✪ আরও পড়ুন: ‘মায়ের রান্না খাবারের জন্য পাগল আমি’

এছাড়াও বলেন, এবার ঈদের দিন একটা চেয়ার নিয়ে নামাজ পড়তে যাব। এখন তো বসে-দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার সুযোগ নেই আমার। নামাজ পড়ে আবার বাসায় চলে আসব।

সবশেষ একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অভিনেতা বলেন, আমি মা-বাবার সঙ্গে খুব বেশি যে কাটিয়েছি তা নয়। মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়ার পর সেখানে না পড়ার কারণে বাবা অভিমান করে। বাবার সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এরপর ধীরে ধীরে মা-বাবার সঙ্গে এই দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। তাদের সঙ্গে সব সময় দেখাও হতো না। আমিও সব সময় ঈদে বাড়ি যেতাম না। এ জন্য এই কষ্টটা হয়, বাবার সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি যাইনি বলে মায়ের ভালোবাসাও পাইনি। আমি এইচএসসি শেষে পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার পর ঈদের আনন্দ আর বুঝতে পারিনি।

সম্পর্কিত

আরও পড়ুন

×