ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

চাটমোহরে ফসলি জমির মাটি বিক্রির হিড়িক, নীরব ভূমিকায় প্রশাসন

চাটমোহরে ফসলি জমির মাটি বিক্রির হিড়িক, নীরব ভূমিকায় প্রশাসন

মাটি কাটার চিত্র

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২২ | ১৭:৫৯ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ | ১৭:৫৯

বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ধুলাউড়ি ও রামনগর গ্রামের মধ্যবর্তী মাঠ থেকে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন পার্শ্ববর্তী দোলং গ্রামের আনোয়ার হোসেন। পুকুর সংস্কারের নামে ঝাঁকড়া গ্রামের বাচ্চু, জাহাঙ্গীর ও ফোরকানের যৌথ মালিকানাধীন একটি পুকুর থেকে যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন ঝাঁকড়া গ্রামের আব্দুল গফুর।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিন উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের পূর্বটিয়ারতলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চাটমোহর-পাবনা সড়কের পশ্চিম পাশ থেকে শফিকুল ইসলাম নামক এক ব্যক্তি এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে পুকুর খনন করে ট্রলি ও ট্রাকযোগে মাটি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যত্র। এছাড়া বাহাদুরপুর গ্রামে জনাব হাজীর বাড়ির পেছনে বিলে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করছেন দেলোয়ার হোসেন।

মাটি কাটার সময়
 
এসব পুকুর খননকারী ও মাটি বিক্রেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারা প্রশাসনের অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি। ওই ইউনিয়নের ভূমি অফিসের নায়েবের কাছ থেকে জানা গেছে, তাদের কারোরই মাটি কাটার অনুমতি নেই।

শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, গুনাইগাছা পূর্বপাড়া ইট ভাটার সামনে পুকুর সংস্কারের নামে খনন চলছে। মৃত রোস্তম আলীর চার ছেলে রাজ্জাক, ইদ্রিস, জাফর, রেজাউল বাড়ির পাড় বাধার জন্য মাটি কাটছেন বলে জানা যায়। তবে তারা মাটি বিক্রি করছেন না বলে দাবি করেন। এছাড়া প্রশাসনের অনুমতি না থাকলেও স্থানীয় বর্তমান চেয়ারম্যান রজব আলী বাবলু, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মওলা তাদের মাটি কাটতে অনুমতি দিয়েছেন বলে জানা যায়।

সেখানে উপস্থিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মওলা বলেন, পুকুরের পাড় ভেঙে যাচ্ছে। তাই মাটি কেটে পাড় বাধা হচ্ছে। মাটি বিক্রি করা হবে না। তবে প্রশাসনের অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, কিছু মাটি ব্যবসায়ী ফসলি জমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। মাটি বহনকারী কুত্তা গাড়ি, ট্রলি, ট্রাক চাটমোহরের বিভিন্ন রাস্তায় দ্রুত গতিতে চলাচল করছে। আকার ভেদে প্রতি গাড়ি মাটি ৫শ’ থেকে ১৫’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেক জায়গায় সড়কের অংশ কেটে গাড়ি উঠা-নামার ব্যবস্থা করায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি এসব যানবাহনে মাটি বহন করার সময় ধুলাবালিতে পথে চলাচলকারী মানুষের নানা সমস্যা হচ্ছে। মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বায়ু দূষণজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

মাটি কাটার সময়

মাটি নিয়ে যাওয়ার কারণে আশপাশের ফসলি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানানোর পর তারা পুকুর খনন বন্ধ করে দিলেও কিছুদিন পর মাটি ব্যবসায়ীরা আবার মাটি কাটা শুরু করেন। এভাবেই ফসলি জমিতে পুকুর খনন আর মাটি বিক্রির উৎসব চলছে। অনেকে আবার দিনে মাটি না কেটে রাতের আঁধারে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারিতেও বন্ধ হচ্ছে না মাটি কাটা ও বিক্রির ব্যবসা।
 
এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, এসি ল্যান্ড ও ইউএনও স্যাররা খবর পেয়ে আমাদের জানালে আমরা গিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়ে আসি। পরে আবার কাটা শুরু করে। এজন্য কঠোর অভিযান দরকার। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা গেলে মাটি কাটা ও বিক্রি কমে আসবে।

আরও পড়ুন: একদিনে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়েছে প্রায় ৮ হাজার মোটরসাইকেল

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানজিনা খাতুনের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈকত ইসলাম বলেন, মাটি কাটার তো অনুমতি নেই। আমরা অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করি। কখনও পুলিশ পাঠিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। সমস্যা হলো কিছুদিন পর আবার শুরু করে। কিংবা একজনকে বন্ধ করলে অন্য জায়গায় অন্য কেউ মাটি কাটা শুরু করে। এখানে আরেকটি সমস্যা হলো মাটির দরকার, কিন্তু মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বেপরোয়াভাবে মানুষ মাটি কাটা ও বিক্রি করছে। আপনারা আমাদের তথ্য দেন, আমরা ব্যবস্থা নেব।

সম্পর্কিত

আরও পড়ুন

×