ঢাকা বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

ঈদের পর শুরু, এ বছরেই ১৫০ দেশে লাল-সবুজের পতাকা ওড়াবেন আসমা আজমেরী 

ঈদের পর শুরু, এ বছরেই ১৫০ দেশে লাল-সবুজের পতাকা ওড়াবেন আসমা আজমেরী 

যে দেশেই যান সেখানকার কৃষ্টি-কালচার জানার চেষ্টা করেন এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি তাদেরকে জানান আসমা আজমেরী।

তৌহিদুজ্জামান সোহান

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২২ | ১১:৫৫ | আপডেট: ০৩ মে ২০২২ | ১৯:৩১

সেদিনই সবুজ পাসপোর্ট নিয়েই বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণের জিদ চাপে তার। শুরু হয় বিশ্বজয়ের পদযাত্রা। এরপর থেকে আর কেউ থামাতে পারেনি তাকে। একের পর এক দেশে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন। একটার পর একটা ভিসা লাগিয়েছেন সবুজ পাসপোর্টের পাতায়। পুরো দুনিয়াকেই বানিয়ে ফেলেছেন খোলা আঙিনা। 

বলছিলাম বাংলাদেশি পরিব্রাজক কাজী আসমা আজমেরীর কথা। এরইমধ্যে ১২৫টি দেশে পৌঁছে দিয়েছেন লাল-সবুজের বার্তা। এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এবারের ঈদটিও সেখানেই কাটালেন। কি করছেন, এবার কোন দেশে যাচ্ছে ইত্যাদি নানা বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয় চ্যানেল 24 অনলাইন-এর।

তার সঙ্গে যখন কথা হলো তখন যুক্তরাষ্ট্রে রোববার সকাল, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের চাঁদরাত। যাচ্ছিলেন জ্যাকসন হাইটসে। সেখানেই ঈদ উদযাপন করবেন বলে জানালেন। উৎফুল্ল চিত্তে বললেন, ‘অনেক দিন পর ঈদ উপলক্ষে হাতে মেহেদি মাখব এবার। বেশ এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে।’ করোনার প্রকোপ হ্রাস পাওয়ায় এবারের ঈদও হবে বিধিনিষেধমুক্ত। সবাই মিলে মেতে উঠবে ঈদের আনন্দে। তাই কথায় কথায় এও জানালেন, নিউইয়র্কে এত বাঙালি আছে যে সেখানে গেলে মনেই হয় না বিদেশে আছেন।

১১৫টি দেশ ঘোরা শেষে গত বছরের ডিসেম্বরে দেশ ছাড়েন। উদ্দেশ্য সেই একটাই সবুজ পাসপোর্টের পাতা ভারী করা; আরও নানান দেশের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানো। এবারের যাত্রায় দেশ ছেড়ে ১০ দেশ ঘুরে আপাতত ঈদ উদযাপন করছেন।

বললেন, ‘গত ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন ১১৬তম দেশ লেবাননের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাড়ি। লেবানন থেকে যাই দক্ষিণ আফ্রিকায়। তারপর এস্তোনিয়া (সোয়াজিল্যান্ড), লোসোথো, মোজাম্বিক, বোতসোয়ানা, নামিবিয়া, অ্যাঙ্গোলা, জাম্বিয়া ঘুরে ১২৫তম দেশ হিসেবে জিম্বাবুয়ে পা রাখি। সেখান থেকে মুসলিম সাম্রাজ্যের দেশ তুরস্কে কিছুদিন কাটিয়ে নিউইয়র্কে চলে আসি। ঈদের পরেই ১২৬তম দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেব।’ 

এরপর যান পুরোনো আবাসভূমি যুক্তরাষ্ট্রে। আগেও শিকাগোতে থেকেছেন তিনি। সে সূত্রে আগেই ঈদ উদযাপন করেছেন মার্কিন মুলুকে। এবারের ঈদটাও যুক্তরাষ্ট্রে উদযাপন করেই ফের দেশভ্রমণে বের হবেন। উচ্ছ্বসিত-অদম্য আজমেরী জানালেন, চলতি বছরের মধ্যেই ১৫০টি দেশ ভ্রমণ শেষ করতে চান তিনি।

এ কথাটা শুনেই জানতে ইচ্ছে হলো এবার কোন দেশ? প্রশ্ন করতেই জানালেন, পরবর্তী গন্তব্য ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশসমূহ। তিনি বলেন, ‘ঈদের পর বাহামা, এন্টিগুয়া ও বারবুডা, বার্বাডোস, ডমিনিকাসহ ওদিককার নতুন নতুন দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ 

তার মতো একজনকে যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ২০১৫-২০১৬ সালে ইউরোপের দেশসমূহে, তুরস্কসহ আরও অনেকে দেশেই ঈদ পালন করেছি। বলতে গেলে বেশিরভাগ ঈদই আমার দেশের বাইরেই উদযাপন করা হয়।’

দেশের বাইরে অন্য দেশে ঈদ পালনে কেমন বিচিত্রতা লক্ষ্য করেছেন, কী কী আকর্ষণীয় বিষয় আছে এমন প্রশ্নের জবাবে দেশকে বুকে ধারণ করা আজমেরীর সোজা সাপ্টা উত্তর, ‘যত যাই বলেন, দেশের মতো ঈদের মজা আর কোথাও পাইনি।’ আরও বললেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে এখনও ঈদ করা হয়নি। তাই ওই অঞ্চলের অভিজ্ঞতা বলতে পারছি না।’ দেশকে নিয়ে আরও বললেন, ‘বাংলাদেশের ঈদে যত মজা, যত বিচিত্রতা তা পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই।

বাইরের দেশে ঈদ উদযাপনের মজার অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিলাম এই লাল-সবুজের পায়রার কাছে। সে প্রশ্নে স্মৃতিচারণ করলেন গত বছরের ঈদের কথা। গত বছর রোজা এবং কোরবানি দুটো ঈদই কাটিয়েছেন ভারতে। কারণ করোনার ভয়াল প্রকোপে ২৩৩ দিন আটকে ছিলেন গোয়ায়। বিধিনিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ ঈদটিও ফিকে হতে দেননি আসমা আজমেরী।

বললেন, ‘যে গেস্ট হাউজে আমরা ছিলাম সেখানে অন্যান্য হিন্দু-বৌদ্ধসহ ধর্মাবলম্বীর মানুষ ছিলেন। মজার ব্যাপার হলো ঈদের দিন এই নানা ধর্মের মানুষগুলো এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের জামাত করেছিলেন। সেটা দেখার মতো একটা বিষয় ছিল। উৎসব পালনে ধর্ম যে কোনো বাধা হতে পারে না তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রচিত হয়েছিল ওই গেস্ট হাউজে।’

এই যে এত এত দেশ ভ্রমণ তার উদ্দেশ্য সবারই জানা। তবুও আবার বললেন, ‘সবুজ পাসপোর্ট তথা বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে পৃথিবীর সব দেশেই যে ভ্রমণ করা যায় সেই বার্তাটাই সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাইছি আমি। যেসব দেশে যাই, সেখানেই বাংলাদেশকে উপস্থাপনের চেষ্টা করি। এখন যে এত এত মানুষ বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাচ্ছে তাদের দেখে খুবই ভাল লাগে আমার।’

বাঙালি জাতি সম্পর্কে অন্যান্য দেশের মানুষের ধারণা কেমন, তারা আপনাকে কিভাবে গ্রহণ করে এমন প্রশ্নও রেখেছিলাম আসমা আজমেরীর কাছে। তিনি বললেন, ‘বাঙালি জাতি সম্পর্কে অন্যান্য দেশের মানুষ খুবই ভাল ধারণা পোষণ করে। বাঙালি জাতির আন্তরিকতার কথা বলে তারা। প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও তারা খুব সুনাম করে। আর সবচেয়ে গর্বের কথা হলো, সারা বিশ্বে কোথাও বাঙালিদের কোনো দুর্নাম নেই। আর আমার কথা আর কি বলবো! সবাই খুব ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে আমাকে নিয়ে। সবাই খুব সহজেই গ্রহণ করে আমাকে। বন্ধুরা তো আমার নাম কন্টাক্ট লিস্টে ‘বাংলাদেশ’ নামেই সেভ করে। বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশের নারী পরিব্রাজক হওয়ায় অনেকেই অবাক চোখে তাকান, তারপর প্রশংসা শুরু করেন।’ 

শেষে জানতে ইচ্ছে হলো আবার কবে দেশে ফিরছেন এই সবুজ পাসপোর্টের অ্যাম্বাসেডর। তা শুনে বললেন, ‘এখনই কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারছি না। তবে দেশে আমি একটা লাইব্রেরি করেছি। সেটির কিছু কাজে দেশে যেতে হতে পারে। তবে সেটি এ বছরে আর হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে আগামী বছরের জুলাইতে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

এভাবেই নানা কথা শোনালেন আসমা আজমেরী। আর তার নানা গল্পে অনুপ্রাণিত হয় স্কুল-কলেজের কিশোর-তরুণরা। তারা আসমার গল্প থেকে রসদ নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন তৈরি করে। এক দিন এই স্বপ্নবাজরাই দুনিয়া জয় করবে বলে বিশ্বাস সবুজ পাসপোর্টের অ্যাম্বাসেডরের।

আরও পড়ুন

×