ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

পৃথিবীতে যেভাবে ঈদ উদযাপন শুরু হয়

পৃথিবীতে যেভাবে ঈদ উদযাপন শুরু হয়

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ মে ২০২২ | ১২:২৪ | আপডেট: ০১ মে ২০২২ | ১৩:১৬

এসময়ে দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। সারাবছরে যত পণ্য ও সেবা কেনাবেচা হয়, এর বড় অংশ হয় এই ঈদে। ঈদ ইসলামের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। তবে এই ধর্মের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে ঈদের প্রচলন শুরু হয়নি। ঈদুল আজহা কখন ও কোন প্রেক্ষাপটে চালু হয় তা ইতিহাস থেকে জানা যায়। কিন্তু ঈদুল ফিতর কখন ও কিভাবে প্রচলিত হয়, সে সম্পর্কে তথ্য কমই জানা যায়।

যখন ঈদ চালু হয়
ইসলামের ইতিহাস বিষয়ক গবেষক এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ঈদ উদযাপন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান মিয়াজী বলেন, হিজরী দ্বিতীয় সনে ঈদের প্রবর্তন হয়।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। সে সময়কে ভিত্তি ধরে হিজরী সাল গণনা করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে অবশ্য হিজরী সাল গণনা শুরু হয় আরও ১৭ বছর পরে। খলিফা হজরত উমরের (রা.) সময়ে।

তিনি বলেন, ‘হিজরী প্রথম বছরের অষ্টম মাস। অর্থাৎ শাবান মাসে রোজা বাধ্যতামূলক করার আয়াত নাজিল হয়। পরে নবম মাস। অর্থাৎ রমজানে এক মাস সিয়াম সাধনাকে ফরজ করা হয়।

এরপর হিজরী দ্বিতীয় সালে বিধান দেয়া হয় রমজান মাস- চাঁদের হিসাবে ২৯ দিন বা ৩০ দিনেও শেষ হতে পারে। এটি  শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদ উদযাপন করা হবে। ঈদের সামাজিকতা ওই সময় থেকে শুরু হয়।

এ বিষয়ে আনাস নামে মহানবীর একজন সাহাবা বা সাথীর বর্ণনা করা একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া বলছে, মদিনায় যাওয়ার পর নবী দেখলেন, সেখানকার মানুষ বছরে দুটি বড় উৎসব উদযাপন করেন। তিনি তখন জানতে চান, সেগুলো কী উৎসব? এগুলো ছিল নওরোজ ও মিহিরজান।যেগুলো সেখানকার বাসিন্দাদের ধর্ম এবং গোত্রের রীতি অনুযায়ী একটি শরতে এবং আরেকটি বসন্তকালে উদযাপিত হতো।

অধ্যাপক মিয়াজী বলেন, তখন সেসব উৎসবের আদলে মুসলমানদের জন্য বছরে দুটি ধর্মীয়, সামাজিক ও জাতীয় উৎসব উদযাপনের রীতি প্রবর্তন করা হয়। ঈদের প্রচলন নিয়ে এর বাইরে আর কোনও বক্তব্য বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।

ঈদ উদযাপন মদিনায় শুরু হলেও পরবর্তীতে পুরো দুনিয়ায় মুসলমানদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে প্রচলিত হয় ঈদ উদযাপন। কালক্রমে অঞ্চলভেদে এই উৎসবে ভিন্ন ভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হয়।

যেভাবে প্রথম যুগে ঈদ উদযাপন হতো
আরবি ঈদ শব্দের মানে খুশি, আনন্দ বা উৎসব। মুসলমানদের জন্য ঈদ উদযাপন ওয়াজিব অর্থাৎ অবশ্য পালনীয়। ঈদ উদযাপনের কিছু নিয়ম ইসলামে নির্দিষ্ট করা আছে।

এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ঈদের দিন সকালে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা, যা সব মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয়। এছাড়া ঈদুল ফিতরে ফিতরা দেয়াও অবশ্য পালনীয় রীতি। ফিতরা ঈদের নামাজের আগে অসহায় গরিব-দুঃখীদের দিতে হয়।

অধ্যাপক মিয়াজী বলেন, যখন প্রথম ঈদের প্রচলন চালু হয়, তখন এখনকার ঈদের মতো আতিশয্য ছিল না। নবী মুহাম্মদ ঈদের দিনে গোসল করে উত্তম পোশাক পরে নামাজ পড়তে যেতেন। ঈদের নামাজের পর মিষ্টি দ্রব্য খাওয়া এবং আত্মীয় পরিজন, প্রতিবেশী বন্ধুদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেওয়াজ ছিল।

বঙ্গে যখন ঈদ শুরু হয়
ইতিহাসবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, দেড়শ' বছর আগেও এ অঞ্চলে সাধারণের মধ্যে ঈদ তেমন বড় কোনও উৎসব ছিল না।
তার মতে, ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়তুল্লাহর সময় বঙ্গে উৎসব করে ঈদ উদযাপনের চল শুরু হয়।

তিনি বলেন, এর আগে এখানে মুসলমান ছিলেন অনেক।কিন্তু তাদের রীতিনীতির মধ্যে লোকায়ত ধর্মের মিল ছিল বেশি। যে কারণে ওই সময়ে ঈদ উদযাপনের তথ্য তেমন পাওয়া যায় না।মুঘলরা ঢাকায় আসে ১৬১০ সালে। তখন তাদের পাঠানো নায়েব-নাজিমরা ঈদ উদযাপন করতেন।

অধ্যাপক মামুন বলেন, ঈদের চাঁদ উঠলে তারা আনন্দ-উৎসব শুরু করতেন। কামান দাগা হতো। ঈদের দিন একসঙ্গে নামাজ পড়তেন। নামাজ পড়ে ফেরার পথে হাতি বা ঘোড়ার পিঠ থেকে সাধারণ মানুষের দিকে পয়সা ছুড়ে দিতেন। ঈদ তাদের নিজেদের মধ্যেই উদযাপিত হতো। সাধারণ মানুষের সেটার সঙ্গে সংযোগ ছিল না।

তিনি বলেন, মুঘলদের তৈরি ঈদের একটা প্রতীক এখনো ঢাকায় আছে। সেটি হচ্ছে ধানমন্ডি ঈদগাহ।

ঢাকাকেন্দ্রীক ঈদ উৎসব
অধ্যাপক মামুন যোগ করেন, এর আগে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে রোজা বা ঈদ উদযাপনের তেমন চল ছিল না। সেই সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো ছিল না।

উনিশ শতকের গোড়ার দিকে এ অঞ্চলে মুসলমানের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেসময় ঈদ উদযাপন বাড়তে থাকে বলে উল্লেখ করা হয় বিভিন্ন ইতিহাসবিদের লেখায়। একসময় দিল্লির মুঘলদের অনুকরণে ঢাকায় ঈদের মিছিল হতো।

ইতিহাসবিদদের মতে, বর্তমানে ঈদ যেমন ব্যাপক উৎসবের আকার পেয়েছে, এর শুরুটা হয় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র হওয়ার পর। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যা আস্তে আস্তে বিস্তৃত হতে থাকে। এর আগে ঈদ উদযাপনের কেন্দ্র ছিল ঢাকা।আনুষ্ঠানিকতার প্রায় পুরোটাই ছিল ঢাকাকেন্দ্রীক। যে কারণে ঐতিহাসিক বর্ণনায় ঢাকার ঈদ সম্পর্কেই জানা যায়।

১৮৮৫ সালে ঐতিহাসিক জেমস ওয়াইজের লেখা উল্লেখ করে অধ্যাপক মামুন বলেন, ওই সময় গ্রামাঞ্চলে ঈদের উদযাপন একেবারে কম ছিল। এমনকি অনেক জায়গায় ঈদের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়, তা-ও অনেকে সঠিকভাবে জানতেন না। মসজিদের সংখ্যাও সেসময়ে কম ছিল। এখন ইসলাম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বেড়েছে। মুসলমানের সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে ঈদ উদযাপনের পরিধিও বেড়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশজুড়ে বড় উদযাপনে পরিণত হয়েছে ঈদ। এর বড় কারণ একে ঘিরে তৈরি হওয়া অর্থনীতি।

সম্পর্কিত

আরও পড়ুন

×