ঢাকা বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

নাস্তায় লবণ বেশি হওয়ায় স্ত্রীকে খুন : ভারতে বউ পেটানোর ঘটনা ঘটে অহরহ

নাস্তায় লবণ বেশি হওয়ায় স্ত্রীকে খুন : ভারতে বউ পেটানোর ঘটনা ঘটে অহরহ

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২২ | ০৯:০১ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ | ১৭:৫৯

পুলিশ কর্মকর্তা মিলিন্দ দেশাই ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে জানান, ‘মুম্বাইয়ের পার্শ্ববর্তী থানে শহরের ব্যাংক কর্মচারী নিকেশ ঘাগ তার ৪০ বছর বয়সী স্ত্রীকে পিটিয়ে এবং পরে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে। কারণ সাবুদানা দিয়ে রান্না করা খিচুড়িতে লবণ বেশি হওয়ায় সে প্রচণ্ড চটে গিয়েছিল।

ওই দম্পতির ১২ বছরের যে ছেলে নিজের চোখে এই হত্যাকাণ্ড দেখেছে - সে পুলিশকে জানায়, তার বাবা বেডরুমে ঢুকে লবণ বেশি হওয়া নিয়ে তার মা নির্মলাকে পেটাতে শুরু করে।

দেশাই আরো বলেন, বাচ্চাটি কাঁদতে কাঁদতে তার বাবাকে থামার জন্য বারবার অনুরোধ করেছে। কিন্তু অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি বউকে পেটাতেই থাকে এবং এক পর্যায়ে গলায় একটি দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে। হত্যাকাণ্ডের পর নিকেশ ঘাগ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে ছেলে তার নানি এবং মামাকে ফোন করে।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যখন ওই বাড়িতে যাই, তার আগেই পরিবার অচেতন ওই নারীকে হাসপাতালে নেয়। কিন্তু ততক্ষণে সে মারা গেছে। অভিযুক্ত স্বামী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে বলে সে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিল। তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়।

তবে এমনটা নতুন নয়। খাবার নিয়ে বচসার জেরে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন হওয়ার খবর মাঝে মধ্যেই ভারতের মিডিয়াতে শিরোনাম হয়। জানুয়ারি মাসে দিল্লির কাছে নয়ডা এলাকায় রাতের খাবার দিতে অস্বীকার করার জন্য স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে পুলিশ একজনকে আটক করে।

২০২১ সালের জুন মাসে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে খাবারের সাথে সালাদ না দেওয়ার জন্য বউকে হত্যার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মাস ছয় আগে বাঙ্গালোরে ফ্রাইড চিকেন ঠিকমত ভাজা হয়নি বলে বউকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয় ২০১৭ সালেও বিবিসির এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে রাতের খাবার দিতে দেরি করার জন্য এক লোক গুলি করে তার স্ত্রীকে মেরে ফেলেছে।

এ বিষয়ে নারী অধিকার কর্মী মাধবি কুকরেজা বলেন, ‘হত্যার ঘটনা মানুষের নজর কাড়ে’ কিন্তু নারীর প্রতি এমন সহিংসতার ঘটনা সমাজে নিয়মিত ঘটছে এবং তা ‘গোপন’ করে রাখা হচ্ছে। 

নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে ভারতের বছরের পর বছর যেসব খবর হয় তার অধিকাংশই ঘটে পরিবারের ভেতর। স্বামী বা স্বজনরাই এসব সহিংসতার হোতা। ২০২০ সালে পুলিশের কাছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৯২ নারী ঘরের ভেতর সহিংসতার অভিযোগ করেছিলেন। তার অর্থ, সে বছর পুলিশ প্রতি পাঁচ মিনিটে একটি করে এ ধরণের অভিযোগ পেয়েছে।

তবে এমন সহিংসতা শুধু যে ভারতে হচ্ছে তা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া হিসাবে, বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর একজনই সহিংসতার শিকার হয় এবং আক্রমণের প্রধান হোতা স্বামী বা ঘনিষ্ঠ পুরুষ সঙ্গী। ভারতের বেলাতেও এই পরিসংখ্যান একই রকম।

তবে নারীর প্রতি এসব সহিংসতা নিয়ে মুখ না খোলার একটি সংস্কৃতি রয়েছে ভারতে। যেটি সবচেয়ে উদ্বেগজনক তাহলো সমাজে এসব সহিংসতা অনেকটাই গ্রহণযোগ্য।

পরিবার নিয়ে ভারত সরকারের সর্ব-সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় (এনএফএইচএফফাইভ) অবিশ্বাস্য সব চিত্র ফুটে উঠছে।

চল্লিশ শতাংশের বেশি ভারতীয় নারী এবং ৩৮ শতাংশ পুরুষ ঐ সমীক্ষায় প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, শ্বশুর বাড়ির লোকদের অসম্মান করলে, পরিবার এবং সন্তানদের ঠিকমত দেখভাল না করলে, স্বামীকে না বলে বাইরে গেলে, যৌন সংগমে আপত্তি করলে, অথবা ঠিকমত রান্না না করলে স্বামীরা স্ত্রীদের পেটাতেই পারেন। চারটি রাজ্যে ৭৭ শতাংশ নারীই মনে করেন এসব ক্ষেত্রে স্ত্রীকে পেটানোর অধিকার স্বামীর রয়েছে।

আরও পড়ুন

×